মেক্সিকোতে আঘাত হানতে পারে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মেলিসা: জ্যামাইকা সহ ক্যারিবীয় অঞ্চলে চরম দুর্যোগের শঙ্কা
বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাংলাদেশের মানুষের জন্য আরেকটি উদ্বেগের খবর। আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’ দ্রুত গতিতে শক্তিশালী হয়েCategory 4 ক্যাটাগরির হারিকেনে পরিণত হতে পারে।
এর ফলে জ্যামাইকা এবং উত্তর ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার রাতের দিকে অথবা মঙ্গলবার সকালে জ্যামাইকাতে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে।
**জ্যামাইকাতে সর্বোচ্চ ক্ষতির আশঙ্কা**
ঘূর্ণিঝড় মেলিসার কারণে জ্যামাইকাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানে ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা, শক্তিশালী বাতাস এবং জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানতে পারে।
জ্যামাইকার প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন এতে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। দেশটির সরকার এরই মধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্রিস্টোফার টফটন জানিয়েছেন, হাসপাতালের শয্যা খালি রাখতে জরুরি ও অস্ত্রোপচার-বহির্ভূত চিকিৎসা স্থগিত করা হয়েছে।
**আশঙ্কার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পূর্বাভাস**
মেলিসা ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মাইল বেগে অগ্রসর হচ্ছে এবং এটি আরো শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, রবিবার দুপুরের মধ্যে এটি Category 4 অথবা তার চেয়েও শক্তিশালী হারিকেনে পরিণত হতে পারে।
এর ফলে জ্যামাইকা, হাইতি এবং ডমিনিকান রিপাবলিকের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু কিছু অঞ্চলে ২৫ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে, এমনকি হাইতির কিছু অংশে তা ৩৫ ইঞ্চি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এর প্রভাবে রাস্তাঘাট ও ভবনগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে এবং অনেক জনপদ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতীতে ঘূর্ণিঝড় ‘বেরিল’-এর আঘাতেও জ্যামাইকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যদিও সেটি সরাসরি আঘাত হানেনি, তবুও ভারী বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, মেলিসা জ্যামাইকাতে আঘাত হানলে তা এই মৌসুমের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
**আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি**
জ্যামাইকার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার অথবা সোমবার নাগাদ এখানে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে। এরই মধ্যে দেশটির সরকার দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
বিমানবন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হলোনেস জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।
হাইতি এবং ডমিনিকান রিপাবলিকেও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে এরই মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
পূর্ব কিউবা, দক্ষিণ বাহামা এবং টার্কস ও কেইকোস দ্বীপপুঞ্জেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
**বৈশ্বিক উষ্ণতা ও দুর্যোগের সম্পর্ক**
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, যার ফলে এ ধরনের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যাও বাড়ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে এর সরাসরি প্রভাব না পড়লেও, সমুদ্র উত্তাল থাকার কারণে সেখানেও প্রভাব পড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেকোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে স্থানীয় সরকার ও জনগণের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি।
বাংলাদেশের মানুষের ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই এই দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: CNN