স্মৃতি ধরে রাখতে গানের সুর: স্মৃতিভ্রষ্টদের জীবনে নতুন দিগন্ত।
বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতি হারানো এক জটিল সমস্যা। ধীরে ধীরে প্রিয়জনদের ভুলে যাওয়া, পরিচিত জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া- এমন অনেক কষ্টের সম্মুখীন হন স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষরা। বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ।
উন্নত বিশ্বে এই সমস্যার সমাধানে নতুন দিশা দেখাচ্ছে ‘মেমোরি কোয়ার’ বা স্মৃতি বিষয়ক গানের দল। গানের মাধ্যমে স্মৃতি ফিরিয়ে আনার এক অভিনব চেষ্টা এটি।
গবেষণা বলছে, গান স্মৃতি রক্ষার এক শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। গান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করে।
স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষেরা যখন একসঙ্গে গান করেন, তখন তা শুধু আনন্দের বিষয় থাকে না, বরং স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখতেও সাহায্য করে। গানের দল তৈরি করে স্মৃতি দুর্বল হয়ে যাওয়া মানুষের প্রতি সমাজের আরও মানবিক হওয়া এবং তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘গিভিং ভয়েস’ নামের একটি সংগঠন এই ধরনের গানের দল তৈরি করতে সহায়তা করে। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে বর্তমানে সারা বিশ্বে ৭০টিরও বেশি ‘মেমোরি কোয়ার’ রয়েছে।
এছাড়া ‘মিউজিক মেন্ডস মাইন্ডস’, ‘আলঝেইমার’স কোরাস’, এবং ‘দ্য আনফরগেটেবলস কোরাস’-এর মতো আরও অনেক গানের দল তৈরি হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, গান আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি তৈরির প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গান শুনলে মস্তিষ্কের যে অংশে স্মৃতি তৈরি হয়, তা ভালোভাবে কাজ করে।
স্মৃতি দুর্বল হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পরিচিত গানগুলি পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। গানের দলগুলি তাদের সামাজিক জীবনকে আরও উন্নত করে তোলে এবং একাকীত্ব দূর করতে সহায়তা করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, স্মৃতি বিষয়ক গানের দলগুলো স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। গানের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়।
গান গাওয়ার সময় মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে কাজ করে, যা স্মৃতি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
এই ধারণাটি বাংলাদেশেও নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিভ্রষ্টতার সমস্যাও বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে, গানের দল তৈরি করা হলে তা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য যেমন উপকারী হবে, তেমনি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও মানসিক support প্রদান করবে।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা পেলে, এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশেও সাফল্য পেতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক