মৃত্যু ও শোক: জে বি হাং-এর নতুন উপন্যাসে এক নারীরin বেদনা!

এখানে প্রকাশিত হলো কোরীয়-আমেরিকান লেখিকা জে.বি. হ्वाং-এর প্রথম উপন্যাস ‘মেন্ডেল স্টেশন’-এর আলোচনা। বইটি মূলত শোক, প্রিয়জন হারানোর বেদনা, এবং একজন মানুষের জীবনের গভীর ক্ষত নিয়ে লেখা।

উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র মিরিয়াম, একজন কোরীয়-আমেরিকান নারী, যিনি সান ফ্রান্সিসকোতে পোস্ট অফিসের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। মিরিয়ামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এস্থার-এর আকস্মিক মৃত্যু হয়। ভ্যান নেস স্টেশনে ট্রেনের লাইনে পড়ে তার মৃত্যু হয়, যা মিরিয়ামকে এক গভীর শোকের সাগরে ভাসিয়ে তোলে।

উপন্যাসে এস্থার-এর মৃত্যুর কারণটি স্পষ্ট করা হয়নি, তবে জানা যায় ঘটনার দিন তিনি মদ্যপান করেছিলেন। মূলত, লেখক মিরিয়ামের শোকের গভীরতা, মানসিক অস্থিরতা এবং ধীরে ধীরে সেই শোককে মেনে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি ফুটিয়ে তুলেছেন। একজন প্রিয়জনকে হারানোর পর একজন মানুষ কিভাবে মানসিক, আবেগিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, ‘মেন্ডেল স্টেশন’ সেই গল্পই বলে।

উপন্যাসটিতে লেখক এশীয়-আমেরিকান সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন, যা শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের থেকে ভিন্ন। লেখকের বর্ণনায় উঠে এসেছে পোস্ট অফিসের কর্মীদের জীবন, তাদের একঘেয়েমি এবং সহকর্মীদের মধ্যেকার বন্ধুত্বের চিত্র। বইটিতে ২০১৯-২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুর দিকের ঘটনাগুলোও স্থান পেয়েছে, যা মিরিয়ামের জীবনে আরও বেশি গভীর প্রভাব ফেলেছিল। প্রিয় বন্ধুকে হারানোর পর মিরিয়ামের ঈশ্বর-বিশ্বাসের ভিত নড়ে যায়।

শোক ভুলতে তিনি এস্থারকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখতে শুরু করেন, যা কখনোই গন্তব্যে পৌঁছায় না।

“এস্থার, আমি জানতে চেয়েছিলাম, তোমার মৃত্যুর পর কেন আমি আত্মহত্যা করতে চাইনি, যেখানে বাবার মৃত্যুর পর আমি সবসময় সে কথাই ভেবেছি। তুমি কি আমাকে এখন চিনতে পারবে, আমার বিশ্বাস ছাড়া, তোমাকে ছাড়া? আমি তোমাকে ছাড়া নিজেকে পছন্দ করি না,”

এভাবেই মিরিয়াম তার বন্ধুকে লেখা এক চিঠিতে নিজের অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

উপন্যাসটি বিশেষভাবে নারী, বিশেষ করে এশীয়-আমেরিকান নারী এবং যারা সম্প্রতি প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের জন্য গভীর আবেদন সৃষ্টি করবে। তবে, যেকোনো পাঠক, যিনি জীবনের গভীরতা ও সম্পর্কের টান অনুভব করতে চান, তাদের জন্যও বইটি মূল্যবান। জে.বি. হ्वाং-এর লেখনশৈলী অত্যন্ত শক্তিশালী।

তিনি বর্ণনার সূক্ষ্মতা থেকে শুরু করে ভাষার কাব্যিক সৌন্দর্য—সবকিছুই দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখিকা এখানে একজন নারীর মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে চিত্রিত করেছেন। একজন এশীয়-আমেরিকান হিসেবে শ্বেতাঙ্গ প্রধান সাহিত্য জগতে তার এই উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লেখকের বর্ণনাভঙ্গি পাঠকের মনে গভীর রেখাপাত করে। পাঠক যেন মিরিয়ামের অনুভবগুলো নিজের চোখেই দেখছে, তার কষ্টগুলো নিজের ভেতরেই অনুভব করছে।

‘মেন্ডেল স্টেশন’ আমাদের সেই চিরন্তন সত্যের কথা মনে করিয়ে দেয়—জীবন চলতেই থাকে। যারা চলে গেছে, তারাও চায় আমরা বাঁচি, জীবনকে ভালোবাসি।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *