ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত প্রায় তিন দশক আগে সংঘটিত একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত দুই ভাইয়ের সাজা নতুন করে নির্ধারণ করেছে। এই ঘটনা আবারও আলোচনায় এসেছে, যখন লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক মাইকেল জেসিক মঙ্গলবার এক যুগান্তকারী রায়ে অভিযুক্ত এরিক ও লয়েল মেনেনদেজের সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে কমিয়ে ৫০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এর ফলে তারা প্যারোলের জন্য যোগ্য হয়েছেন। ১৯৮৯ সালে লয়েল ও এরিক মেনেনদেজ তাদের বাবা-মাকে, জোসে ও কিটি মেনেনদেজকে বেভারলি হিলসের বাড়িতে গুলি করে হত্যা করে।
সেই সময় তাদের বয়স ছিল যথাক্রমে ২১ ও ১৮ বছর। এই ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৯৬ সালে তারা প্রথম-ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
এই মামলার শুরু থেকে, অভিযুক্ত দুই ভাই দাবি করেছেন যে তারা তাদের বাবার দ্বারা বছরের পর বছর ধরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং আত্মরক্ষার্থে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। অন্যদিকে, আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ভাইদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের বিশাল উত্তরাধিকারের অর্থ পাওয়া।
তাদের এই কর্মকাণ্ডের পেছনে ছিল কয়েক মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির লোভ। বিচারক জেসিক তার রায়ে বলেছেন, যদিও ভাইয়েরা একটি ভয়ানক অপরাধ করেছে, তবে তারা তাদের জীবন পরিবর্তনের জন্য “অনেকটা কৃতিত্ব” পাওয়ার যোগ্য।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে কারাকর্তৃপক্ষের দেওয়া একটি চিঠি, যেখানে তাদের পুনরায় সাজা দেওয়ার সমর্থন জানানো হয়েছিল, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। জানা গেছে, মেনেনদেজ ভাইয়েরা কারাগারে বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন, যার মধ্যে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী বন্দীদের জন্য একটি সহায়তা গোষ্ঠী এবং কারাগারের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার সংগ্রহ করা অন্যতম।
বিচারক জেসিক বলেন, “আমি বলছি না যে তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত, এটি আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়।” তিনি যোগ করেন, “একদিন তাদের এই সুযোগ পাওয়া উচিত।”
এই রায়ের ফলে এখন ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য প্যারোল বোর্ডের এবং গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। আগামী ১৩ জুন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট প্যারোল বোর্ডের শুনানির কথা রয়েছে, যেখানে ভাইদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
বোর্ড হয় তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে, অথবা গভর্নরের কাছে প্যারোল মঞ্জুরের সুপারিশ করতে পারে। যদি বোর্ড প্যারোল মঞ্জুরের সুপারিশ করে, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গভর্নরের হাতে ১২০ দিন সময় থাকবে।
এদিকে, মেনেনদেজ ভাইদের মুক্তির জন্য আরও বেশ কয়েকটি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তারা নতুন করে বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন এবং গভর্নরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাদের সমর্থকরা বলছেন, মেনেনদেজ পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এরিক ও লয়েলের ভালো আচরণের প্রমাণ দিয়েছেন এবং তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত।
তারা আরও যুক্তি দেখিয়েছেন, ঘটনার সময় শিশুদের যৌন নির্যাতনের বিষয়ে সমাজে সচেতনতা কম ছিল, তাই সাজার পুনর্বিবেচনা করা উচিত। অন্যদিকে, মামলার বর্তমান প্রসিকিউটর নাথান হকম্যান ভাইদের মুক্তির বিরোধিতা করে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড ছিল লোভের ফল, নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ নয়।
তিনি মনে করেন, মুক্তি পাওয়ার আগে ভাইদের তাদের কৃতকর্মের জন্য সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া উচিত। হকম্যান আরও উল্লেখ করেছেন, রাজ্য প্যারোল বোর্ডের মূল্যায়ন অনুসারে, মুক্তি পেলে ভাইদের সহিংস হওয়ার “মাঝারি” ঝুঁকি রয়েছে। এই মামলার রায় এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ক্যালিফোর্নিয়াসহ সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন