শিরোনাম: তিন দশক পর মুক্তির পথে মেনেনdez ভাইয়েরা? পুরনো মামলার শুনানি, নতুন করে আলোড়ন
ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে ১৯৮৯ সালে মা-বাবাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এরিক ও লাইল মেনেনdez-এর মুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এই শুনানিতে তাদের কারাদণ্ডের মেয়াদ কমানো যায় কিনা এবং তারা প্যারোলের যোগ্য কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দী এই দুই ভাইয়ের মুক্তির জন্য তাদের আইনজীবী, পরিবারের সদস্য এবং অনলাইন সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের সমর্থনে সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র এবং নেটফ্লিক্সের একটি নাটক মুক্তি পাওয়ার পর বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।
এরিক ও লাইলের মুক্তির জন্য আইনজীবীরা তিনটি প্রধান পথে চেষ্টা করছেন: কারাদণ্ডের পুনর্বিবেচনা, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং নতুন তথ্যের ভিত্তিতে নতুন করে বিচার শুরু করার আবেদন।
পুনর্বিবেচনার শুনানিতে বিচারক তাদের কারাদণ্ডের মেয়াদ পরিবর্তনের বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন। যেখানে তাদের কারাবাসের সময়কালে ভালো আচরণের বিষয়টিও দেখা হবে। অন্যদিকে, নতুন বিচার হলে শুধুমাত্র হত্যার কারণগুলো বিবেচনা করা হবে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের জন্য মুখিয়ে আছেন মেনেনdez পরিবারের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তাদের মতে, এরিক ও লাইল দুজনেই কারাগারে থাকাকালীন অনুশোচনা করেছেন এবং নিজেদের শুধরেছেন।
তারা মনে করেন, শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে বর্তমানে সমাজে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে তাদের সাজার পুনর্বিবেচনা করা উচিত। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বাবার দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বর্তমান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নাথান হচম্যান এরিক ও লাইলের মুক্তির বিরোধিতা করছেন। তিনি তাদের মুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছেন।
হচম্যান নতুন করে বিচার শুরুর আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি, এরিক ও লাইলের কারাদণ্ডের পুনর্বিবেচনার আবেদন বাতিলেরও চেষ্টা করেছেন।
শুনানির কয়েক ঘণ্টা আগে হচম্যানের দল শুনানির কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য আবেদন করেছে। তাদের মতে, প্যারোল বোর্ড কর্তৃক ভাইদের বিস্তারিত মূল্যায়ন এখনো সম্পন্ন হয়নি এবং আদালতকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
হচম্যানের দাবি, ভাইদের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য ছিল সাজানো। তিনি তাদের বিগত ৩০ বছর ধরে মিথ্যা বলার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। যদিও এরিক ও লাইলের পরিবার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির এই অবস্থানের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
আদালতে এরিক ও লাইলের আইনজীবী সাবেক প্রসিকিউটর, কারারক্ষী এবং পরিবারের সদস্যদের সাক্ষী হিসেবে হাজির করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যারা কারাগারে তাদের ভালো আচরণের প্রমাণ দেবেন।
যদি বিচারক তাদের কারাদণ্ড কমানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে একটি প্যারোল বোর্ড তাদের মামলা পর্যালোচনা করে প্যারোলের সুপারিশ করতে পারবে। এরপর এই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য গভর্নর নিউসামের কাছে যাবে, যিনি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ১২০ দিন সময় পাবেন।
তবে, এরিক ও লাইলের পরিবারের সদস্যরা তাদের মুক্তির জন্য আকুল আবেদন জানালেও, তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, এখন মধ্যবয়সী এই দুই ভাইকে মানুষ সেই তরুণ হিসেবেই মনে রাখবে, যাদেরকে ১৯৯০-এর দশকে আদালতের কাঠগড়ায় দেখা গিয়েছিল।
যদি তারা মুক্তি পান, তবে তাদের সমাজের সঙ্গে পুনরায় মিশতে সমস্যা হতে পারে। কারণ, তারা তাদের জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারের ভেতরেই কাটিয়েছেন।
যদি কারাদণ্ডের পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যায়, তবুও এরিক ও লাইলের মুক্তির চেষ্টা থেমে থাকবে না। তারা নতুন বিচার এবং গভর্নরের ক্ষমার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
গভর্নর নিউসাম চাইলে তাদের সাজা মওকুফ করতে পারেন, যা তাদের তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে পারে। গভর্নর এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও, তিনি রাজ্য প্যারোল বোর্ডকে তাদের মুক্তি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছেন।
প্যারোল বোর্ড আগামী ১৩ই জুন ভাইদের নিয়ে একটি শুনানি করবে এবং এরপর তারা গভর্নরের কাছে তাদের সুপারিশ জানাবে।
এছাড়াও, এরিক ও লাইলের আইনজীবীরা নতুন বিচারের জন্য আবেদন করেছেন। তাদের দাবি, ১৯৯০-এর দশকে তাদের বিচারের সময় তাদের বাবার দ্বারা যৌন নির্যাতনের নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালে এরিক মেনেনdez-এর লেখা একটি চিঠিও রয়েছে, যেখানে নির্যাতনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতে শুনানির সময় এরিক ও লাইল তাদের বাবা-মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছিলেন, তবে তারা দাবি করেছিলেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। তাদের প্রথম বিচারের সময়, তারা জানিয়েছিলেন, তারা তাদের বাবার দ্বারা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং তাদের মা সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এই মামলায় অভিযুক্তদের আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, তারা আত্মরক্ষার জন্য তাদের বাবা-মাকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে।