মনের স্বাস্থ্যও দীর্ঘ জীবনের জন্য অপরিহার্য, নতুন গবেষণায় উঠে এল।
বার্ধক্যের সঙ্গে সুস্থ জীবনের ধারণা আমাদের সকলেরই জানা। স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের কথা আমরা প্রায়শই শুনে থাকি।
কিন্তু একটি নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিলেই দীর্ঘ জীবন লাভ করা সম্ভব নয়। মানসিক এবং আবেগিক সুস্থতাও এক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
কানাডার গবেষকরা বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের ‘সর্বোত্তম সুস্থতা’ নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই ‘সর্বোত্তম সুস্থতা’-র সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তাঁরা সামাজিক সমর্থন, বার্ধক্য সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সুখ এবং জীবন ধারণের মানের মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে দৈনন্দিন কাজকর্ম সীমিত আকারে করার ক্ষমতাকেও তাঁরা গুরুত্ব দিয়েছেন।
গবেষণাটি প্রমাণ করেছে যে, যারা শুরুতে ভালো ছিলেন না, তাঁদের মধ্যেও অনেকে মাত্র তিন বছরের মধ্যে তাঁদের সুস্থতা ফিরে পেয়েছেন।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাক্টর-ইনওয়েন্টাশ স্কুল অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক এবং ইনস্টিটিউট অফ লাইফ কোর্স অ্যান্ড এজিং-এর গবেষক ড. মাবেল হো বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ৮,০০০ এর বেশি বয়স্ক মানুষের মধ্যে অনেকেই, যারা শুরুতে ভালো ছিলেন না, তাঁরাও মাত্র তিন বছরের মধ্যে তাঁদের সুস্থতা ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছেন।
এই ফলাফল বার্ধক্যে সুস্থতা কমে যাওয়ার প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে এবং জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।”
এই গবেষণাটি ‘কানাডিয়ান লঞ্জিটিউডিনাল স্টাডি অন এজিং’ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. এসমে ফুলার-থমসন বলেন, “এই গবেষণা বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক, তাদের যত্নকারী এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য আশা জাগায়।
কারণ এটি দেখাচ্ছে যে সঠিক সমর্থন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক বয়স্ক মানুষ খারাপ অবস্থা থেকে ভালো অবস্থায় ফিরতে পারেন।”
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মানসিক এবং আবেগিকভাবে ভালো ছিলেন, তাঁদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকার সম্ভাবনা প্রায় পাঁচগুণ বেশি ছিল।
ড. হো আরও যোগ করেন, “সহায়ক সম্পর্ক, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, যেমন—নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, ধূমপান না করা এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মতো বিষয়গুলো সুস্থ জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে, যেহেতু গবেষণাটি কানাডায় পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা উপলব্ধ, তাই এর ফলাফল সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে তিনটি প্রধান পরিবর্তনের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা: ব্যায়াম, ঘুম এবং খাদ্যাভ্যাস।
শুধু পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ বা ব্যায়াম করলেই হবে না, একাকীত্ব এবং সম্পর্ক রক্ষার মতো বিষয়গুলোর প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনের যেকোনো বয়সে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
তাঁরা মনে করেন, “যদি আপনি মনে করেন আপনি ভালো হবেন, ভালো অনুভব করবেন এবং ভালো কিছু করতে পারবেন, তাহলে সেই সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।”
সুতরাং, মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা না করে, একটি সুস্থ জীবনের জন্য চেষ্টা করা আমাদের সকলেরই কর্তব্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন