মেটা’র বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা: ফেসবুকের ভবিষ্যৎ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুরু হতে যাচ্ছে, যেখানে প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড-এর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে অভিযোগ। মূলত, মেটা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে তারা একচেটিয়া বাজার তৈরি করতে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ কিনেছিল।
যদি এই মামলায় মেটা’কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তাহলে তাদের জনপ্রিয় এই দুটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হতে পারে।
এই মামলাটি শুধু মেটা’র জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে গঠিত ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)-এর ক্ষমতা পরীক্ষারও একটি বড় সুযোগ।
২০২০ সালে, যখন ফেসবুক ছিল, তখনই তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
এফটিসি’র অভিযোগ, মেটা তাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের একটি পুরোনো কৌশল অনুসরণ করেছে, যেখানে বলা হয়েছিল, “প্রতিযোগিতা করার চেয়ে কিনে নেওয়াই ভালো।” তাদের মতে, ফেসবুক সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চিহ্নিত করে তাদের কিনে নেয়, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারে সাহায্য করেছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে তারা ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাজারে প্রবেশ করা কঠিন করে তোলে এবং তাদের দুর্বল করে দেয়।
এফটিসি’র মতে, ফেসবুক মূলত এমন একটি সময়ে এই কাজগুলো করেছে, যখন বিশ্ব ডেস্কটপ কম্পিউটার থেকে মোবাইল ডিভাইসের দিকে ঝুঁকছিল।
মেটা’র বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায়, কোম্পানিটি এটিকে “বাস্তবতা বিবর্জিত” বলে অভিহিত করেছে।
তাদের দাবি, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ চীনের মালিকানাধীন টিকটক, ইউটিউব, এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে।
মেটা আরও বলেছে, যদি তাদের ভেঙে দেওয়া হয়, তবে তা আমেরিকান উদ্ভাবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে চীনের সুবিধা বাড়িয়ে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলার রায় মেটা’র জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, যদি তাদের ইনস্টাগ্রাম আলাদা করতে হয়, তবে তাদের বিজ্ঞাপনের ব্যবসা অর্ধেক কমে যেতে পারে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে ইনস্টাগ্রাম মেটা’র সবচেয়ে লাভজনক বাজার, যেখানে তাদের বিজ্ঞাপনের আয়ের ৫০.৫ শতাংশ আসে।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ধরে রাখতেও ইনস্টাগ্রামের ভূমিকা অনেক।
আদালতে এই মামলার বিচারক হিসেবে রয়েছেন জেমস বোয়াসবার্গ।
তিনি ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এফটিসি’র বাজারের সংজ্ঞা নিয়ে তার কিছু সন্দেহ রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলাটি প্রযুক্তি বাজারের ভবিষ্যৎ এবং অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
মেটা’র পাশাপাশি, গুগল ও অ্যামাজনের মতো অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিও বর্তমানে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার সম্মুখীন।
গুগলের বিরুদ্ধে একটি মামলা চলছে, যেখানে তাদের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস