ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা’র বিরুদ্ধে এবার ঘানাতে মামলা দায়ের হতে চলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপত্তিকর বিষয়বস্তু, যেমন— খুন, চরম সহিংসতা, এবং শিশুদের প্রতি হওয়া যৌন নির্যাতনের মতো বিষয়গুলো নিয়মিত দেখতে বাধ্য হওয়া কন্টেন্ট মডারেটরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের চরম অবনতির কারণে এই মামলাগুলো করা হচ্ছে। জানা গেছে, ঘানার আক্রা শহরে অবস্থিত মাজোরেল নামক একটি কোম্পানির কর্মীরা মেটা’র হয়ে কন্টেন্ট মডারেশনের কাজ করেন।
এই কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর কনটেন্ট দেখতে দেখতে মানসিক অবসাদে ভুগছেন। গভীর উদ্বেগ, অনিদ্রা, এবং মাদকাসক্তির মতো সমস্যাগুলোর শিকার হচ্ছেন তারা।
কর্মীদের অভিযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে সহায়তা তাদের সরবরাহ করা হয়, তা যথেষ্ট নয়। অনেক সময় চিকিৎসা পেশাদারদের পরিবর্তে অন্য বিভাগের কর্মীরাই তাদের কাউন্সেলিং করেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা, ‘ফক্সগ্লোভ’ (Foxglove), এই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর আগে কেনিয়ার সামাসোর্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও একই ধরনের অভিযোগ তুলে মেটা’র বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।
ফক্সগ্লোভের পরিচালক জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন এবং কর্মীদের অধিকার রক্ষায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন।
মামলার প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে ঘানার একটি আইন সংস্থা, এজেন্সি সেভেন সেভেন। তারা দুটি পৃথক মামলা করার পরিকল্পনা করছেন।
একটি মামলায় কর্মীদের মানসিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হবে। এছাড়া, একজন কর্মীকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগেও আরেকটি মামলা হতে পারে।
ফক্সগ্লোভের মতে, কন্টেন্ট মডারেটরদের সঙ্গে হওয়া এই ধরনের আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়।
আফ্রিকার দেশগুলোতে, বিশেষ করে যেখানে জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে প্রায়ই কন্টেন্ট মডারেশনের কাজ করানো হয়।
ঘানার কর্মীদের অভিযোগ, তাদের মাসিক বেতন জীবনযাত্রার মানের তুলনায় খুবই কম। তাদের কর্মঘণ্টা অনেক বেশি এবং পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে বেতন কাটারও নিয়ম রয়েছে।
কর্মীদের অভিযোগ, তাদের কর্মপরিবেশও খুব একটা ভালো নয়।
তবে, মাজোরেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কর্মীরা ভালো বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পান। তাদের দাবি, কর্মীদের দেওয়া বেতন ঘানার সর্বনিম্ন মজুরির চেয়ে দশগুণ বেশি।
এছাড়া, কর্মীদের জন্য আবাসন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।
অন্যদিকে, মেটা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের সঙ্গে কাজ করা কোম্পানিগুলোকে কর্মীদের উপযুক্ত বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ করে।
কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও কন্টেন্ট মডারেশন কর্মীদের কাজের চাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে আপত্তিকর কনটেন্টের পরিমাণও।
তাই, এই ধরনের কর্মীদের সুরক্ষা এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান