সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করে, ছবি ও ভিডিও আপলোড করে।
এই বিশাল ডেটা ভাণ্ডারকে নিরাপদ রাখতে, আপত্তিকর কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলার জন্য কাজ করেন কন্টেন্ট মডারেটররা।
সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই কাজটি করতে গিয়ে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
বিষয়টির গভীরতা উপলব্ধি করতে একজন কন্টেন্ট মডারেটরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হলো।
আফ্রিকার দেশ ঘানার আক্রা শহরে অবস্থিত একটি বহুজাতিক সংস্থায় (Teleperformance) ‘সোলোমন’ নামের এক ব্যক্তি মেটা’র হয়ে কন্টেন্ট মডারেটরের কাজ করতেন।
তাঁর প্রধান কাজ ছিল, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে আপত্তিকর ও নিয়ম বহির্ভূত বিষয়গুলো সরিয়ে ফেলা।
শুরুতে কাজটা কঠিন মনে হলেও, তিনি ভেবেছিলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি এমন সব ঘটনার সাক্ষী হন, যা তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
সোলোমনের ভাষায়, “প্রথম দিকে তেমন কিছু চোখে পড়েনি।
কিন্তু ধীরে ধীরে আমি এমন সব ভিডিও দেখতে শুরু করি, যা আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে।
নৃশংস হত্যাকাণ্ড, শিশু নির্যাতন, এমনকি পর্নোগ্রাফির মতো বিষয়গুলো নিয়মিত দেখতে হতো।
একটা সময় আমি স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে চলে যাচ্ছিলাম।”
কাজের চাপে তিনি এতটাই মানসিক অবসাদে ছিলেন যে, নিজের পরিচিতজনদের সঙ্গেও স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারছিলেন না।
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থাও তাঁর ছিল না।
এক সময় তিনি এতটাই হতাশ হয়ে পড়েন যে, আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোলোমনের মতো আরও অনেকে এই ধরনের কাজ করেন।
তাঁদেরও একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়।
কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা না করে, অনেক কোম্পানি তাঁদের সুযোগ মতো ব্যবহার করে থাকে।
কর্মী আহত হলে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিবর্তে, অনেক সময় কোম্পানিগুলো দায়িত্ব এড়িয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে কাজ করা অন্য এক মডারেটর ‘এবেল’-এর অভিজ্ঞতাও একই রকম।
তিনি জানান, “আমি জানতাম না, এই ধরনের কাজ করতে হবে।
প্রতিদিন মানুষকে চামড়া ওঠা থেকে শুরু করে পর্ন ভিডিও দেখতে হবে, এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল।
এখন আমি আর কোনো কিছুতেই ভয় পাই না।
আমার মনে হয়, আমি অনুভূতিহীন হয়ে গেছি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কন্টেন্ট মডারেটরের কাজ অত্যন্ত মানসিক চাপপূর্ণ।
কারণ, তাঁদের নিয়মিতভাবে সহিংসতা, ঘৃণা এবং যৌনতামূলক বিষয়গুলোর সম্মুখীন হতে হয়।
এর ফলে কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (PTSD) মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
কোম্পানিগুলোকে উপযুক্ত কাউন্সেলিং ও থেরাপির ব্যবস্থা করতে হবে।
সেই সঙ্গে, কাজের পরিবেশ উন্নত করা এবং কর্মীদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান