ফেসবুকের মূল সংস্থা মেটা, একটি বিতর্কিত ‘ডিপফেক’ অ্যাপ্লিকেশন প্রস্তুতকারকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এই অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের ছবি থেকে নগ্ন বা যৌনতাপূর্ণ ছবি তৈরি করতে সক্ষম।
হংকং-ভিত্তিক এই প্রস্তুতকারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মেটার বিজ্ঞাপন নীতি ভেঙে তাদের প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। মেটা কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলি তাদের প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।
ডিপফেক প্রযুক্তি বর্তমানে একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে, কারো ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা ও আপত্তিকর ছবি তৈরি করা সম্ভব।
সম্প্রতি, এই ধরনের একটি অ্যাপ, যার নাম CrushAI, মেটার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে, ব্যবহারকারীরা অন্যদের ছবি ‘নগ্ন’ রূপে পরিবর্তন করতে পারতেন।
মেটা জানিয়েছে, CrushAI তাদের নিয়ম ভেঙে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য অন্তত ১৭০টি ব্যবসার অ্যাকাউন্ট এবং ১৩৫টির বেশি ফেসবুক পেজ ব্যবহার করেছে।
মেটার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অ্যাপ প্রস্তুতকারক তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রায় ৮৭,০০০-এর বেশি বিজ্ঞাপন চালিয়েছে, যা তাদের নীতি লঙ্ঘন করেছে। মূলত, এই বিজ্ঞাপনগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছিল।
মেটা কর্তৃপক্ষের মতে, এই ধরনের বিজ্ঞাপনগুলোতে ‘একটি ছবিতে পোশাক পরিবর্তন করুন’, ‘মেয়েদের পোশাক সরান’ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ ছিল।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন সিনেটর ডিক ডারবিন মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গকে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি জানতে চেয়েছেন, কিভাবে মেটা এই ধরনের বিজ্ঞাপন অনুমোদন করল এবং এই বিপজ্জনক প্রবণতা রোধে মেটা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মেটা জানিয়েছে, তারা এই ধরনের বিজ্ঞাপন শনাক্ত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি তৈরি করছে। তারা তাদের স্বয়ংক্রিয় কন্টেন্ট মডারেশন সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যাতে এই ধরনের বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত শব্দ, শব্দগুচ্ছ এবং ইমোজিগুলি সনাক্ত করা যায়।
মেটা আরও জানিয়েছে, তারা অন্যান্য প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করছে, যাতে এই ধরনের ক্ষতিকর কন্টেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
ডিপফেক এবং ‘নডিফাইং’ অ্যাপ্লিকেশনগুলির বিস্তার বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এই ধরনের প্রযুক্তি অপব্যবহারের ফলে, ব্যবহারকারীদের সম্মানহানি এবং মানসিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রযুক্তি সংস্থাগুলির পাশাপাশি, সরকার এবং ব্যবহারকারীদেরও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন