শিরোনাম: অল্প বয়সেই স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি: মেটাবলিক সিন্ড্রোম থেকে সাবধান!
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক কিছু সমস্যার সমষ্টি, যা ‘মেটাবলিক সিন্ড্রোম’ নামে পরিচিত, তা অল্প বয়সে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া (Dementia) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। আমাদের দেশের মানুষের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখানেও বাড়ছে এই ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা।
আসুন, জেনে নিই মেটাবলিক সিন্ড্রোম কী, কেন এটি উদ্বেগের কারণ এবং কীভাবে এর থেকে বাঁচা যেতে পারে।
মেটাবলিক সিন্ড্রোম আসলে কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যার একটি গুচ্ছ। যাদের মধ্যে অন্তত তিনটি সমস্যা রয়েছে, তাদের এই সিন্ড্রোম আছে বলে ধরা হয়।
এই সমস্যাগুলো হলো:
- পেটের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ জমা (স্থূলতা)।
- উচ্চ রক্তচাপ।
- উচ্চ রক্তে শর্করার পরিমাণ।
- রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চ মাত্রা।
- শরীরে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) -এর কম পরিমাণ।
গবেষণা বলছে, যাদের মধ্যে এই সমস্যাগুলো রয়েছে, তাদের অল্প বয়সে স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২৪ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। সাধারণত ৬৫ বছরের কম বয়সে স্মৃতিভ্রংশ হলে, তাকে ‘ইয়ং-অনসেট ডিমেনশিয়া’ বলা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গবেষণায় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। ‘নিউরোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার প্রধান গবেষক, ড. মিনউ লি-এর মতে, “মেটাবলিক সিন্ড্রোম-এর কারণে অল্প বয়সে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তাই, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে, শুরুতেই এই সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। মেটাবলিক সিন্ড্রোমের সঙ্গে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য জড়িত থাকার কারণ হলো, এই সিন্ড্রোমের কারণে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
এছাড়াও, রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, যা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ায়।
তাহলে, মেটাবলিক সিন্ড্রোম থেকে বাঁচতে আমাদের কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করানো উচিত।
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: ভাজা-পোড়া ও ফাস্ট ফুড বাদ দিয়ে প্রচুর ফল, সবজি এবং শস্য জাতীয় খাবার খেতে হবে। খাদ্যতালিকায় মাছ, ডিম ও অন্যান্য প্রোটিন রাখা জরুরি।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমের অভাব শরীরের অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে.
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটা, দৌড়ানো বা অন্য কোনো শারীরিক কার্যকলাপ করা উচিত.
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ কমাতে যোগা, মেডিটেশন বা শখের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন।
ডা. রিচার্ড আইজ্যাকসন-এর মতে, “জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এবং মেটাবলিক সিন্ড্রোমকে নিয়ন্ত্রণে রেখে অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমানো বা বিলম্বিত করা সম্ভব।”
মেটাবলিক সিন্ড্রোম প্রতিরোধের জন্য জীবনযাত্রায় পরিবর্তন জরুরি হলেও, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। তাই, কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস ও সচেতনতাই পারে এই রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখতে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন