বালির একটি বারে পান করা একটি ককটেল কেড়ে নিয়েছিল অ্যাশলি কিংয়ের দৃষ্টিশক্তি। ঘটনাটি ২০১১ সালের, যখন তিনি বন্ধুদের সাথে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। ভয়াবহ সেই ঘটনার পর জীবন নতুন মোড় নেয়, দৃষ্টিহীন হয়েও অ্যাশলি হার মানেননি।
কানাডার ক্যালগারির বাসিন্দা অ্যাশলি এবং তাঁর বন্ধু ক্রিস্তা, দু’জন মিলে স্কুল জীবন শেষ করার পর এক বছর ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। সেই উদ্দেশ্যে তাঁরা প্রথমে পা রাখেন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। সুন্দর সমুদ্র আর রাতের ঝলমলে আলোয় পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল কুটা বিচ।
একদিন রাতে, কুটার একটি বারে বন্ধুদের সাথে গল্প করার সময় অ্যাশলি একটি ককটেল পান করেন।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে অ্যাশলি অনুভব করেন তাঁর শরীর ভালো নেই। তিনি বুঝতে পারছিলেন না তাঁর কী হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে শুরু করে।
দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর জানা যায়, অ্যাশলির পান করা ককটেলটিতে মিথানল মেশানো ছিল। মিথানল এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ।
চিকিৎসকরা জানান, এর প্রভাবে তাঁর চোখের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
দৃষ্টিহীন হয়ে যাওয়ার পর অ্যাশলি কিংয়ের জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। প্রথমে সবকিছু মানতে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।
কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
অ্যাশলি বলেন, “আমি যখন বুঝতে পারলাম আমি আর দেখতে পাবো না, তখন আমার মনে হয়েছিল আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি।”
অ্যাশলি এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। তিনি নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেন এবং সাংবাদিকতা নিয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।
বন্ধুদের উৎসাহে তিনি দক্ষিণ আমেরিকায় ৭টি দেশ ভ্রমণ করেন। এছাড়া, তিনি বিভিন্ন সেবামূলক কাজেও যুক্ত হন।
অ্যাশলি তাঁর নিজের জীবন নিয়ে একটি নাটক লিখেছেন, যা দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের জীবন এবং সমাজে তাঁদের স্থান নিয়ে নতুন করে ভাবতে সহায়তা করে।
বর্তমানে তিনি একটি থিয়েটার কোম্পানিতে কাজ করেন, যেখানে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য থিয়েটারকে আরও সহজলভ্য করার চেষ্টা করেন।
অ্যাশলি কিংয়ের এই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে, জীবনের প্রতিকূলতা জয় করে কীভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। তাঁর এই লড়াই অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।