প্রকাশ্যে আসা যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘মি টু’ আন্দোলনের ঢেউ এখনও অব্যাহত। সম্প্রতি মার্কিন সঙ্গীত শিল্পী ডিডি (Sean “Diddy” Combs) এবং কুখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে উইনস্টিনের (Harvey Weinstein) বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি আবারও এই আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করে।
এই পরিস্থিতিতে, ‘মি টু’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা তারানা বার্ক (Tarana Burke) সিএনএন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ এবং এর মূল লক্ষ্যগুলি নিয়ে কথা বলেছেন।
২০১৭ সালে ‘মি টু’ আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। বার্ক মনে করেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই ভিন্ন।
এখন মানুষ তাদের সঙ্গে হওয়া যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারছে, যা আগে সম্ভব ছিল না। এমনকি কোনো আইনি পদক্ষেপ ছাড়াই, অনেক নারী তাদের অভিজ্ঞতার কথা সবার সামনে তুলে ধরতে পারছেন।
এটি তাদের মানসিক শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বার্কের মতে, ‘মি টু’ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো- যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের প্রতি সমর্থন জানানো, তাদের কথা শোনা এবং সমাজে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, শুধুমাত্র বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করাই এই আন্দোলনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বরং, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের প্রতি সহানুভূতি এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোটাও জরুরি।
ডিডি কম্বসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বার্ক বলেন, এই ধরনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত কঠিন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ২০১৬ সালে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ক্যাসি ভেন্টুরার (Cassie Ventura) ডিডির বিরুদ্ধে করা মামলাটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে হিপ-হপ জগতে নারীদের প্রতি হওয়া যৌন হয়রানির অভিযোগগুলি প্রকাশ্যে আসে।
উইনস্টিনের মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মামলাটি ‘মি টু’ আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কারণ, এর মাধ্যমেই নারীরা তাদের উপর হওয়া যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস জুটিয়েছেন।
বার্ক আরও জানান, ‘মি টু’ আন্দোলনের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো- সমাজের ভুল ধারণা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা।
তিনি মনে করেন, যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে পরিচিত নয়, তাদের পক্ষে এই ধরনের জটিল পরিস্থিতি বোঝা কঠিন।
ভবিষ্যতে ‘মি টু’ আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে বার্ক বলেন, তারা এখন যৌন সহিংসতা বন্ধ করার উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘মি টু’ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো- ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো নারীকে এই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হতে না হয়, সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন