স্বামীর হাতে মৃত্যু নয়, আত্মরক্ষায় খুন! নারীদের নিয়ে গানে ঝড়

মেক্সিকোর একজন সঙ্গীত শিল্পী, যিনি নারীবাদী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, নিজের নতুন গানের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মরক্ষার্থে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য যারা তাদের অত্যাচারীকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল, তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছেন।

ভিভির কুইন্তানা নামের এই শিল্পী সম্প্রতি ‘কোসাস ক্যু সরপ্রেনডেন আ লা অডিয়েন্সিয়া’ (Cosas que Sorprenden a la Audiencia) নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। অ্যালবামটি মূলত তৈরি হয়েছে মেক্সিকোর সেই নারীদের নিয়ে, যারা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে তাদের ওপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

সাধারণত, মেক্সিকোর ‘কররিডোস’ নামের একটি সঙ্গীতে পুরুষদের আধিপত্য দেখা যায়। কুইন্তানা এই ধারার সঙ্গীতকেই বেছে নিয়েছেন, যেখানে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সহিংসতা এবং নারীর প্রতি অবমাননাকর বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়।

তবে, কুইন্তানার এই অ্যালবামটি চিরাচরিত ধারার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি এখানে সেইসব নারীদের গল্প তুলে ধরেছেন, যাদের আত্মরক্ষার কারণে কারাগারে যেতে হয়েছে।

কুইন্তানা মনে করেন, এই গানগুলো সমাজে নারী নির্যাতন এবং বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, মেক্সিকোতে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন নারী নিহত হন।

ভিভির কুইন্তানা বলেন, এই অ্যালবামটি তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য হলো লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার জটিল দিকগুলো তুলে ধরা।

তার মতে, এই অ্যালবামটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার জন্য তৈরি করা হয়নি, বরং মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন করাই এর প্রধান লক্ষ্য।

২০২০ সালে, কুইন্তানার ‘ক্যানসিওন সিন মিদো’ (Canción Sin Miedo) গানটি মেক্সিকোর নারী দিবস উদযাপন এবং লাতিন আমেরিকার নারী আন্দোলনের প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল। এছাড়াও, তিনি ২০২২ সালে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ সিনেমার জন্য নিরাময় ও স্বাধীনতা বিষয়ক একটি গান লিখেছিলেন।

কুইন্তানার নতুন এই কাজটি ‘কররিডোস’ ধারার সঙ্গীতের একটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। যেখানে সহিংসতার পরিবর্তে, যারা নিজেদের আত্মরক্ষা করতে গিয়ে অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

অ্যালবামটির প্রথম গান ‘এরা এল ও এরা ইয়ো’ (Era Él o Era Yo), যেখানে রোকসানা রুইজ নামের এক নারীর গল্প বলা হয়েছে।

যিনি ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়ে তার জীবন বাঁচানোর জন্য ধর্ষককে হত্যা করেন এবং এর ফলস্বরূপ তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে দেশজুড়ে প্রতিবাদের মুখে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়।

আরেকটি গানে, ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর কথা তুলে ধরা হয়েছে, যে তার মায়ের উপর বাবার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবাকে হত্যা করে।

এছাড়াও, ইয়াকিরি রুবিও নামের এক নারীর গল্পও রয়েছে, যাকে অপহরণ ও ধর্ষণের পর অভিযুক্তদের একজন নিহত হয় এবং ইয়াকিরিকে ‘আত্মরক্ষার্থে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগে কারাগারে যেতে হয়।

কুইন্তানা কারাগারের ভেতরে থাকা নারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

তাদের জীবনের গল্পগুলো গানের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। কুইন্তানা মনে করেন, নারীদের নিজেদের রক্ষার অধিকার আছে এবং তাদের আনন্দ উপভোগ করারও স্বাধীনতা থাকা উচিত।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *