বন্দুক নয়, মাইক্রোফোন হাতে: মাদক বিরোধী গানের যুদ্ধে সৈনিক!

মেক্সিকোর এক সেনা সদস্য গানের মাধ্যমে মাদক চক্রের গৌরবগাঁথা প্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বন্দুকের বদলে হাতে মাইক্রোফোন তুলে নিয়ে তিনি তৈরি করছেন দেশপ্রেমের গান, যা মাদক ব্যবসার কুফল তুলে ধরে তরুণ প্রজন্মের কাছে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরবে।

মেক্সিকোতে ‘কররিডো’ নামক এক ধরনের লোকসংগীত বেশ জনপ্রিয়। এই ধারার গানগুলো সাধারণত সমাজের নানা ঘটনা, বীরত্বগাথা অথবা কোনো ব্যক্তির জীবন নিয়ে লেখা হয়। ক্যাপ্টেন এডুয়ার্ডো বারন (Eddy Barrón নামে পরিচিত) নামের ওই সেনা সদস্য এই ঐতিহ্যবাহী গানের ধারাতেই গান বাঁধেন। তবে তাঁর গানের বিষয়বস্তু অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।

তাঁর গানে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের মহিমান্বিত করার পরিবর্তে সেনাদের আত্মত্যাগ, দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং সমাজের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা হয়।

বারনের মতে, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জীবনযাত্রা বর্তমানে বেশ আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়, যা তরুণদের ভুল পথে চালিত করে। তাই তিনি এই ধারার গানের মাধ্যমে তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত করতে চান। তাঁর গানগুলো এরই মধ্যে ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

মেক্সিকোতে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের নিয়ে গান (নারকো করিডোস) লেখার প্রবণতা অনেক দিনের। এসব গানে অপরাধীদের বীর হিসেবে তুলে ধরা হয়, যা সমাজে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক সময় এসব গানের কারণে শিল্পীরা হত্যার হুমকিও পেয়েছেন।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকার বিভিন্ন কনসার্ট ও অনুষ্ঠানে এ ধরনের গান পরিবেশন নিষিদ্ধ করেছে।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবামও এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি এমন এক সঙ্গীত প্রতিযোগিতার ঘোষণা করেছেন, যেখানে ভালোবাসার গান, বিচ্ছেদ অথবা শান্তির বার্তা দেওয়া হবে। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে মেক্সিকোর সংগীতে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, করিডোর জন্ম হয় উনিশ শতকে। তখন এটি ছিল মানুষের মধ্যে ইতিহাস ও ঐতিহ্য পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। পরবর্তীতে মেক্সিকান বিপ্লবের সময় যোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তুলে ধরার জন্য এই ধারার গান ব্যবহৃত হতো।

তবে, এই ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে অনেক বাধা রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানী হোসে ম্যানুয়েল ভ্যালাঞ্জুয়েলার মতে, সরকার কর্তৃক পরিবার-বান্ধব গান তৈরির চেষ্টা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। তাঁর মতে, শান্তির গান সবসময় জনপ্রিয় হয় না, কারণ মানুষ বাস্তবতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

ক্যাপ্টেন বারন মনে করেন, করিডোর মূল সুর পুনরুদ্ধার করা দরকার। তাই তিনি সেনাবাহিনীকে নিয়ে গান লিখছেন এবং আশা করছেন, এর মাধ্যমে মাদক ব্যবসার কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো যাবে এবং তরুণ প্রজন্মকে ইতিবাচক পথের দিকে আকৃষ্ট করা যাবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *