পৃথিবীর ‘সবচেয়ে উপেক্ষিত প্রাণী’ বাদুড় বাঁচাতে এক বিজ্ঞানীর সংগ্রাম!

মেক্সিকোর ‘ব্যাট ম্যান’-এর সংগ্রাম: বাদুড় রক্ষার লড়াইয়ে এক নিবেদিত প্রাণ।

বাদুড়, নামটি শুনলেই অনেকের মনে হয়তো ভ্যাম্পায়ারের কথা ভেসে ওঠে, অথবা তারা কোনো রোগের বাহক—এমন ধারণা করেন অনেকে। বিশ্বজুড়ে এই প্রাণীটির সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি ও ভুল ধারণা বিদ্যমান।

কিন্তু বাস্তুসংস্থান রক্ষায় বাদুড়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই ভুল ধারণা দূর করে বাদুড়দের বাঁচাতে লড়ে যাচ্ছেন মেক্সিকোর বাস্তুবিজ্ঞানী রডরিগো মেডিলিন।

মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক দীর্ঘদিন ধরে বাদুড় নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর মতে, বাদুড়েরা পৃথিবীর সবচেয়ে অবহেলিত প্রাণী। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাদুড়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান। তাঁর এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাভ করেছেন।

ছোটবেলায় একবার একটি বাদুড় হাতে নেওয়ার পরেই রডরিগোর মনে হয়েছিল, জীবন উৎসর্গ করতে চান এই নিরীহ প্রাণীটির জন্য। তারপর থেকেই গুহাগুলো যেন তাঁর প্রিয় স্থান। শান্ত, অন্ধকার আর বাদুড়ের মৃদু শব্দ—এই পরিবেশে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

রডরিগো মেডিলিন মনে করেন, মানুষের মধ্যে বাদুড় সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা খুব জরুরি।

বিশ্বজুড়ে ১,৪০০ প্রজাতির বেশি বাদুড় রয়েছে, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর এক-পঞ্চমাংশ। বাদুড় একমাত্র স্তন্যপায়ী, যারা উড়তে পারে। পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে শুরু করে বিভিন্ন উদ্ভিদের পরাগ সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাদুড়ের জুড়ি নেই।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে প্রায় ৩ কোটি বাদুড় প্রতি রাতে প্রায় ৩০০ টন পোকামাকড় খেয়ে থাকে।

তবে মানুষের কার্যকলাপের কারণে বাদুড়েরা আজ হুমকির মুখে। বাসস্থান ধ্বংস, কীটনাশকের ব্যবহার, বায়ু টারবাইনের মতো নানা কারণে এদের সংখ্যা কমছে। বাদুড়েরা সাধারণত ধীরে প্রজনন করে, বছরে একটি বাচ্চার জন্ম দেয়, যা তাদের সংখ্যা পুনরুদ্ধারের পথে একটি বড় বাধা।

আমাদের দেশেও বাদুড় রয়েছে। এরা বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ণে সাহায্য করে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাদুড়ের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে পারলে, তাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সম্ভব।

রডরিগো মেডিলিন বাদুড় সংরক্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি ‘ব্যাট-ফ্রেন্ডলি অ্যাগেভ ফার্মিং’, আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন এবং বাদুড়ের মাইগ্রেশন ট্র্যাক করছেন। তাঁর মতে, তথ্য, ছবি আর প্রমাণ দিয়ে মানুষের কাছে বাদুড়ের গুরুত্ব তুলে ধরলে, তাদের ভালো না লেগে উপায় নেই। তিনি বিশ্বাস করেন, বাদুড় একদিন মানুষের মন জয় করবেই।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *