মেক্সিকোর রাস্তায় উন্মুক্ত নাচের উৎসব! যেখানে নেই কোনো বাধা!

মেক্সিকো সিটি’র উন্মুক্ত নাচের আসর: সবার জন্য আনন্দের ঠিকানা

রবিবার বিকেল চারটা।

মেক্সিকো সিটির একটি পার্কের বিশাল কাঁচের জানালাওয়ালা একটি প্যাভিলিয়নে প্রায় ৩০০ মানুষের আনাগোনা।

সবার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক, একটাই চাওয়া – কোনো বাধা ছাড়াই, কোনো খরচ ছাড়াই, অবাধে নাচতে পারা।

কুড়ি বছর বয়সী তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে মা ও শিশুদের দল, এমনকি বয়স্ক দম্পতিরাও ডিজে’র কনসোলের চারপাশে ভিড় জমিয়েছে।

সবার মধ্যে যেন একটা চাপা উত্তেজনা।

সুরের মূর্ছনা শুরু হতেই সবাই যেন অন্য জগতে হারিয়ে যায়।

এই নাচের আসরটি ‘নুয়েভা রেড দে বেইলাডোরেস’ বা NRB (নতুন নৃত্যশিল্পী নেটওয়ার্ক) নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত হয়।

তাদের মূল লক্ষ্য হলো এমন একটি স্থান তৈরি করা, যেখানে সবাই মিলেমিশে নাচতে পারবে।

এখানে কোনো প্রবেশ মূল্য নেই, নেই মদের ব্যবস্থা, আর কাউকে কোনো বিশেষ ধরনের নাচের কায়দা শেখানোরও চাপ নেই।

সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অ্যাক্সেল মার্তিনেজ বলেন, “এটা সবার জন্য উন্মুক্ত একটি আমন্ত্রণ, যেখানে তারা নিজেদের মতো করে নিরাপদ পরিবেশে নাচতে পারবে।”

শুরুটা হয়েছিল বন্ধুদের একটি ছোট দল নিয়ে, যারা একটি ফ্ল্যাটে নাচতেন।

ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে, ২০ থেকে ৫০ জন, তারপর ১০০ ছাড়িয়ে যায়।

এরপর তারা শহরের একটি পার্কে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেয়।

মার্তিনেজ আরও বলেন, “নতুন নৃত্যশিল্পী নেটওয়ার্ক আসলে একটি দর্শন ও কর্মের সমষ্টি।

একা নাচ ভালো, কিন্তু অনেক মানুষের সঙ্গে নাচাটা আরও বেশি আনন্দের।”

NRB কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে শহরের ঐতিহাসিক স্থান এবং জাদুঘরের পরিচালকদের কাছ থেকে নাচের আসরের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সহযোগিতা পায়।

পুরনো কারখানা ও বাগানসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে তারা প্রায় ৩০০টির মতো নাচের আয়োজন করেছে।

অনুষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা কর্মীদের বদলে স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতি থাকে, যা সবার মধ্যে বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করে।

অংশগ্রহণকারীরা একে অপরের প্রতি খেয়াল রাখে।

অনুষ্ঠানে নিয়মিত আসা ২৯ বছর বয়সী আনা সেলিয়া আগুস্তিন বলেন, “এমন একটা জায়গায় আসা যেখানে আনন্দ আর শ্রদ্ধাবোধ আছে, এটা মানসিক শান্তি এনে দেয়।”

NRB-এর সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হলো অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমেই তাদের কার্যক্রম সক্রিয় রাখা।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নাচের আসরের প্রচার করা হয়, আবার লোকমুখেও খবর ছড়িয়ে পরে।

২৭ বছর বয়সী মাতেও ক্রুজ বলেন, “আগে আমি নাচ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতাম, কিন্তু আমার শরীর সবসময়ই যেন মদের সঙ্গে মিশে যেত।

এখানে আমি নতুন একটি আশ্রয় খুঁজে পেয়েছি।

নিজের ভেতরের লুকানো অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি।

অন্যের চিন্তা বা আমার নিজের ভেতরের দ্বিধা থেকে মুক্তি পেয়েছি।”

মেক্সিকোর রাজধানী শহরটিতে নাচের সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয়।

বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে এখানকার মানুষজন উন্মুক্ত স্থানে নেচে আনন্দ করে।

তবে NRB-এর নাচের আসরগুলোতে বিভিন্ন বয়সের ও ভিন্ন ধরনের মানুষের সমাগম হয়।

৭৩ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা ইসাবেল মিরাফ্লোরেস তাঁর স্বামীর সঙ্গে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটা খুবই চমৎকার, কারণ এখানে বিনামূল্যে সবাই একত্রিত হতে পারে।

সমাজের সব স্তরের মানুষ এখানে আসে এবং কোনো ঝামেলা ছাড়াই আনন্দ করে।”

সন্ধ্যা নামছে, ঘড়িতে প্রায় সাতটা বাজে।

নাচের শেষ হতে আর এক ঘণ্টা বাকি, তবুও বিখ্যাত ‘বোসকে দে চাপুলটেপেক’ পার্কের প্যাভিলিয়নে প্রবেশের জন্য এখনো লাইনে অপেক্ষা করছেন অনেকে।

মার্তিনেজ বলেন, “আমাদের মতো পুঁজিবাদী সমাজে বিনামূল্যে এমন একটি সুযোগ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

সবার জন্য সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *