কমলা ফুলের দেশে শোকের ছায়া: জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষকদের কান্না!

ঢাকা, [তারিখ] (এপি) – মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী ‘ডে অফ দ্য ডেড’ উৎসবে ব্যবহৃত গাঁদা ফুল, যা সেদেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আজ হুমকির মুখে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দেশটির ফুল চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

এতে করে শুধু ফুল উৎপাদনই ব্যাহত হচ্ছে না, বরং এই ফুলের সঙ্গে জড়িত মেক্সিকোর সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির উপরও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।

**ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই**

মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির বাইরে অবস্থিত একটি গ্রামীণ এলাকা হলো ‘শশিমিলকো’। এখানকার অনেক কৃষক বংশ পরম্পরায় গাঁদা ফুলের চাষ করে আসছেন।

এই ফুল ‘সেম্পাসুচিল’ নামেও পরিচিত। নভেম্বরের ১ ও ২ তারিখে পালিত হওয়া ‘ডে অফ দ্য ডেড’ উৎসবে মৃতদের আত্মার শান্তি কামনায় এই ফুল ব্যবহার করা হয়।

এই দিনে পরিবারের মৃত সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় সমাধিস্থলে ও বাড়িতে বিশেষ পূজা করা হয় এবং তাদের পছন্দের খাবার পরিবেশন করা হয়। এই উৎসবে সেম্পাসুচিল ফুল মৃতের আত্মার পথ আলোকিত করে, এমনটাই বিশ্বাস করে মেক্সিকোর মানুষ।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলের কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

অতিরিক্ত বৃষ্টি, বন্যা, খরা এবং কীটপতঙ্গের উপদ্রবের কারণে তাদের ফুল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক লুসিয়া ওর্টিজ জানান, গত বছর তিনি তার ফসলের প্রায় ৩০ শতাংশ হারিয়েছেন।

অনেক কৃষক বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ তাদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

**অর্থনৈতিক সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা**

এই ফুলের উৎপাদন মেক্সিকোর অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক সূত্র মতে, ২০২৩ সালে ফুল চাষিরা প্রায় ২৭ লক্ষ মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন।

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে অনেক কৃষক তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর্থিক ক্ষতির কারণে সার ও কীটনাশক কেনার মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

অনেকে বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে তাদের পক্ষে এই পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

স্থানীয় সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদী কিছু পদক্ষেপ নিলেও, বিজ্ঞানীরা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের চেষ্টা করছেন। ‘টক্সিনাচকাল’ নামক একটি বীজ সংরক্ষণাগারে বিজ্ঞানীরা স্থানীয় প্রজাতির ফুলের বীজ সংরক্ষণে কাজ করছেন।

তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে ফুলগুলিকে রক্ষা করতে এবং কৃষকদের সাহায্য করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় জাতের ফুলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আরও বেশি মানিয়ে নিতে পারে।

কারণ এই ফুলগুলো বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সক্ষম।

মেক্সিকোর এই সংকট বাংলাদেশের কৃষকদের কথা মনে করিয়ে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের কৃষকরাও প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হন।

অনেক সময় তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়, যা তাদের জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগ নিয়ে আসে।

সেম্পাসুচিল ফুলের চাষ এবং ‘ডে অফ দ্য ডেড’ উৎসব মেক্সিকোর সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ফুলের উৎপাদন কমে যাওয়ায়, সেখানকার মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব পড়েছে। তাদের সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই এখন একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *