শিরোনাম: মার্কিন শুল্কের অনিশ্চয়তা: মেক্সিকোর ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে চলমান বাণিজ্য সম্পর্ক বর্তমানে এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক নীতির কারণে মেক্সিকোর ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে গাড়ি নির্মাণ এবং কৃষি খাতের উদ্যোক্তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার ব্যবসায়ীরা কীভাবে টিকে থাকবেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যেকার এই বাণিজ্য সম্পর্কের ভিত্তি হলো ‘ইউএসএমসিএ’ চুক্তি, যা মূলত ‘যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি’ নামে পরিচিত। এই চুক্তির অধীনে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকার মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা সেখানকার ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং তৈরি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মেক্সিকোর জুয়ারেজের একটি কারখানার মালিক থর সালায়ান্দিয়া। তিনি জানান, তাঁর কারখানায় উৎপাদিত গাড়ির যন্ত্রাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। শুল্কের কারণে অনেক সময় পণ্য সীমান্ত পার হতে পারছে না। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি একটি রাজনৈতিক খেলায় পরিণত হয়েছে, যেখানে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এই শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে গাড়ি শিল্প, যা মেক্সিকোর অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মেক্সিকোর অটোমোবাইল শিল্প বছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রাজস্ব আয় করে এবং দেশটি থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লক্ষ গাড়ি রপ্তানি হয়, যার প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। শুল্কের কারণে এখন অনেক কোম্পানি হয় কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে, নয়তো ব্যবসা গুটিয়ে অন্য কোথাও স্থানান্তরের কথা ভাবছে।
মেক্সিকোর সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী মার্সেলো এবারার্ড কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে রপ্তানি কার্যক্রমকে ইউএসএমসিএ চুক্তির কাঠামোর মধ্যে আনার চেষ্টা করছেন। এছাড়া, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে মেক্সিকোর ব্যবসায়ীরা শুল্কের প্রভাব থেকে রক্ষা পায়। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সরকারের ভালো যোগাযোগ রয়েছে।
এই অনিশ্চয়তার প্রভাব শুধু গাড়ি শিল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। অ্যাভোকাডোর মতো ফল, যা মেক্সিকোর অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেই ব্যবসার ওপরেও শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে। উল্লেখ্য, মেক্সিকো থেকে প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়নের বেশি পাউন্ড অ্যাভোকাডো যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। শুল্কের কারণে এই ফলের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা মার্কিন ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের কারণে শুধু মেক্সিকোর ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, বরং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও। কারণ, এর ফলে পণ্যের দাম বাড়বে, যা মার্কিন ভোক্তাদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে। মেক্সিকোর ন্যাশনাল এজেন্সি অফ অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি প্রোভাইডার্সের পরিচালক আলবার্তো বুস্তামান্তে বলেন, শুল্কের কারণে উভয় দেশেই কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাম জানিয়েছেন, তাঁর সরকার মেক্সিকোর কোম্পানিগুলোর পাশে আছে এবং এই বাণিজ্য চুক্তিকে স্থিতিশীল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে, এই চুক্তির পর্যালোচনা ২০২৬ সালের আগে সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে, মেক্সিকোর ব্যবসায়ীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। অনেকেই হয় বাজার পরিবর্তনের কথা ভাবছেন, নয়তো উৎপাদন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের চেষ্টা করছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি এবং শুল্ক নীতি পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং নিজেদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা