ফ্যাশনের দুনিয়ায় মেয়ের প্রবেশ: সৌন্দর্য নিয়ে উদ্বেগে মা!

সমাজের চোখে সৌন্দর্যের ধারণা দিন দিন যেন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, সবার উপরেই যেন এই সৌন্দর্যের চাপ বাড়ছে। এই চাপ থেকে কীভাবে বাঁচানো যায় শিশুদের?

সম্প্রতি, এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’। যেখানে এক ফ্যাশন লেখক তাঁর সাত বছর বয়সী মেয়ের বেড়ে ওঠা নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

ফ্যাশন দুনিয়ায় কাজ করা এই লেখকের মেয়ে যখন একটি গেম খেলছিল, তখন বিষয়টি তাঁর নজরে আসে। গেমটিতে থাকা একটি পুতুলের মুখে ছিল ময়লা, ব্রণ এবং মেকআপ করার অপশন।

বিষয়টি লেখককে বেশ চিন্তায় ফেলে দেয়। তাঁর মনে হয়, ফ্যাশন জগতে কাজ করার কারণে তিনি যেন দ্বিচারিতার শিকার।

একদিকে, তিনি চান তাঁর মেয়ে ফ্যাশনকে উপভোগ করুক, অন্যদিকে এই জগৎে টিকে থাকার জন্য যে ধরনের সৌন্দর্যের মাপকাঠি তৈরি করা হয়েছে, তা তাঁর কাছে উদ্বেগের।

লেখকের মতে, আজকের দিনে শিশুদের মধ্যে সৌন্দর্য সচেতনতা বাড়ছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে বডি ডিসমরফিয়া বা শরীরের খুঁত নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অল্প বয়সেই মেয়েরা ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, ওজন কমানোর জন্য ইনজেকশন নেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে, যা ফ্যাশন দুনিয়ায় খুব পরিচিত একটি বিষয়।

লেখকের মেয়ে একবার একটি ফ্যাশন শোতে গিয়েছিল। সেখানে র‍্যাম্পে হেঁটে আসা মডেলদের দেখে সে খুব মুগ্ধ হয়েছিল।

ফেরার পথে, এক ফটোগ্রাফার মেয়ের ছবি তোলার জন্য আবদার করেন। মেয়েটি খুব খুশি হয়ে পোজে দিয়ে ছবি তুলেছিল। এমনকী, সে জানতে চেয়েছিল, “ওরা কি আমাকে সুন্দর মনে করেছে, মা?”

লেখকের মতে, এই ধরনের ঘটনাগুলো তাঁর মনে হয়, তিনি যেন তাঁর মেয়ের শৈশব কেড়ে নিচ্ছেন। একদিকে, তিনি চান তাঁর মেয়ে ফ্যাশনকে ভালোবাসুক, অন্যদিকে এই জগৎে মেয়েদের যে শরীরের গড়ন নিয়ে আসতে হয়, তা তাঁর কাছে ভীতিকর।

এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে মেয়েরা নিজেদের বন্ধু বা পরিচিতজনদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে।

বিভিন্ন ফিল্টার ব্যবহার করে নিজেদের ছবি আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। অল্প বয়সেই তারা জানতে শুরু করে, তাদের ত্বক কতটা নিখুঁত বা তাদের শরীর কতটা সুন্দর।

বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, শিশুদের মধ্যে এই ধরনের ধারণা তৈরি হওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ, এখানে তারা প্রতিনিয়ত অসংখ্য ছবি দেখে, যা তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।

লেখকের মতে, শিশুদের মধ্যে এই ধরনের ধারণা তৈরি হওয়া থেকে বাঁচাতে হলে, তাদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার জন্ম দিতে হবে। তাদের শেখাতে হবে, তারা যা দেখছে, তার ভালো-মন্দ দিকগুলো বিচার করতে।

এর মাধ্যমে, তারা সমাজের চাপকে হয়তো কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করতে পারবে।

ফ্যাশন একটি শিল্প, যা মানুষকে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে সাহায্য করে। লেখক চান, তাঁর মেয়ে যেন ফ্যাশনের এই দিকটা উপভোগ করতে পারে। একইসঙ্গে, তিনি চান, তাঁর মেয়ে যেন সমাজের তৈরি করা সৌন্দর্যের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

বর্তমানে, অনেক মা তাঁদের মেয়েদের শরীরের গঠন নিয়ে ইতিবাচক ধারণা দিতে চেষ্টা করেন। তাঁরা মেয়েদের বোঝান, শরীরের প্রতিটি অংশই সুন্দর। শরীরের গঠন নিয়ে যারা খারাপ কথা বলে, তাদের এড়িয়ে চলতে শেখান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মা-বাবা হিসেবে আমাদের উচিত, শিশুদের শরীরের গড়ন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করা। তাদের ভেতরের সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিতে উৎসাহিত করা। তাদের বোঝানো উচিত, বাইরের সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী, আসল সৌন্দর্য হলো মানুষের গুণাবলি।

সর্বোপরি, শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা এবং তাদের সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করতে শেখানোই পারে এই চাপ থেকে তাদের দূরে রাখতে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *