মায়ামিতে অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হলো ২৮ বছর বয়সী এক মার্কিন তরুণীর। জানা গেছে, শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অস্ত্রোপচার করাতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর অবৈধভাবে ঔষধ সেবনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
খবর সূত্রে জানা গেছে, আহমনিক মিলার নামের এই তরুণী লাস ভেগাস থেকে মায়ামিতে গিয়েছিলেন।
গত ৫ই মার্চ, আহমনিক কসমেটিক সার্জারির উদ্দেশ্যে মায়ামিতে আসেন। ৭ই মার্চ সন্ধ্যায় একটি অবৈধ রিকভারি হাউজে তার মৃত্যু হয়। মায়ামি পুলিশ সূত্রে খবর, অস্ত্রোপচারের পর তাকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ দেওয়া হয়েছিল। আহমনিকের সঙ্গে এসেছিলেন তার বোন কিয়েরা বার্নেস।
তারা দুজনেই আভানা প্লাস্টিক সার্জারি নামের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। আহমনিক ‘ব্রেজিলিয়ান বাট লিফট’ (Brazilian Butt Lift) বা BBL এবং লাইপোসাকশন করিয়েছিলেন। BBL পদ্ধতিতে শরীরের অন্য স্থান থেকে ফ্যাট নিয়ে নিতম্বে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ডেইলি মেইল সূত্রে জানা যায়, অস্ত্রোপচারের পর কিয়েরার সঙ্গে ‘কিয়েলার রিকভারি হাউসে’ ছিলেন আহমনিক। বার্নেস জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি তার বোনকে নিথর অবস্থায় দেখতে পান।
মিয়ামির পুলিশ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার দিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে আহমনিককে বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছিল। রাত ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে যখন তার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি, তখন কর্মীরা তাকে দেখতে যান।
এরপর তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেলে ৯১১-এ ফোন করা হয়।
পুলিশের ধারণা, এটি একটি অবৈধ পোস্ট-সার্জারি রিকভারি হোম ছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ আহমনিককে বিছানায় উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থায় পায়।
তার শরীরে ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল এবং দেহে ‘রিগর মর্টিস’-এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। পরে জানা যায়, রাত ১০টা ২৬ মিনিটে তার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ‘কিয়েলার সার্ভিস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে।
মিয়ামি-ডাইড মেডিকেল পরীক্ষকের কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে, অতিরিক্ত ঔষধ সেবনের কারণেই আহমনিকের মৃত্যু হয়েছে।
তার শরীরে ব্যথানাশক ওষুধ ‘অক্সিকোডন’ এবং ‘ব্রোমাজোলাম’-এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ব্রোমাজোলাম একটি শক্তিশালী মাদক, যা সাধারণত নকল পিল বা পাউডারে পাওয়া যায়।
চিকিৎসকদের মতে, অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পর এই দুটি ওষুধের ব্যবহারের কারণেই এমন মারাত্মক পরিণতি হয়েছে। এই দুটি ওষুধ একসঙ্গে সেবন করলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রিকভারি হাউসের মালিক কিয়লা অলিভার, তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে তিনি আহমনিককে দুটি ‘পারকোসেট’ (Percocet) ওষুধ দিয়েছিলেন।
তার কোনো ডাক্তারি লাইসেন্স ছিল না বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। কিয়েরার ভাষ্যমতে, আহমনিকের ঔষধ তৈরির সময় না হওয়ায়, অলিভার তাকে ‘কিয়েরার প্রেসক্রিপশন’ থেকে কিছু ‘পেশী শিথিলকারী’ ওষুধ এবং ‘লেবেলবিহীন’ একটি বোতল থেকে দুটি পারকোসেট দেন।
আহমনিক মিলারের একটি এক বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে। আহমনিকের মা জানিয়েছেন, “আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারি না যে আহমনিক আর নেই। প্রতিদিন নিজেকে বোঝাই যে, এটাই সত্যি।
“তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ের তো তার মেয়ের সঙ্গে থাকার কথা ছিল, কিন্তু…’, এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বর্তমানে, কিয়েলার রিকভারি হাউস এবং মিয়ামি-ডাইড মেডিকেল পরীক্ষকের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: পিপলস