যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ডোর্যালে (Doral), যা ‘লিটল ভেনেজুয়েলা’ নামেও পরিচিত, সেখানকার ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিষয়ক কিছু সিদ্ধান্তের কারণে তাদের বিতাড়িত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সেখানকার ভেনেজুয়েলার বাসিন্দারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগে আছেন।
ডোর্যালের প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বসবাস, যাদের অধিকাংশই ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসী। সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, এমনকি জীবনযাত্রার প্রতিটি স্তরেই ভেনেজুয়েলার একটি সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে।
এই শহরে ভেনেজুয়েলার সংস্কৃতি এমনভাবে মিশে গেছে যে, অনেক সময় মনে হয় যেন তারা তাদের মাতৃভূমিতেই বাস করছে। এখানকার দোকানগুলোতে ভেনেজুয়েলার জাতীয় পতাকার রঙে সজ্জিত টি-শার্ট থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী খাবার আরপাস-এর (arepas) দোকানও চোখে পড়ে।
আশির দশকে কংগ্রেসের তৈরি করা ‘টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস’ (Temporary Protected Status – TPS) নামক একটি প্রোগ্রামের অধীনে অনেক ভেনেজুয়েলার নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নিজ দেশে ফিরতে অনিরাপদ—এমন পরিস্থিতিতে এই প্রোগ্রামটি তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য কিছু পদক্ষেপের কারণে তাদের সেই সুরক্ষা হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উইলমার এসকারেই নামের একজন ভেনেজুয়েলার নাগরিক, যিনি ২০০৭ সালে নিজের দেশ ছেড়ে এসেছিলেন, এখন ডোর্যালে এক ডজনের বেশি ব্যবসার মালিক। তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কর্মীদের অধিকাংশই ভেনেজুয়েলার অভিবাসী, যাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
তিনি জানান, “এই মানুষগুলো এখানে কাজ করে, যা অন্য কেউ করতে চায় না। তাদের এই মানবসম্পদ হারানোটা সত্যিই দুঃখজনক।”
আরেকজন ভেনেজুয়েলার নাগরিক জন, যিনি নয় বছর আগে এখানে এসে একটি নির্মাণ সংস্থা গড়ে তুলেছেন, বলেছেন, “সরকার আমাদের দিকে এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, এটা খুবই কষ্টের। আমরা তো কোনো অপরাধ করতে আসিনি, এসেছি কাজ করতে, দেশ গড়তে।”
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের মধ্যে অনেকেই তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে অনেকেরই হয় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেই, অথবা তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না।
কারণ, ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনো তাদের জন্য অনুকূল নয়।
বর্তমানে, একটি আদালতের আদেশের কারণে টিপিএস-এর (TPS) আওতায় থাকা প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভেনেজুয়েলার নাগরিককে আপাতত বিতাড়িত করা হচ্ছে না।
তবে, এই সুরক্ষা কতদিন বজায় থাকবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। এছাড়া, মানবিক প্যারোলের (humanitarian parole) মাধ্যমে আসা আরো কয়েক লাখ মানুষের ভবিষ্যৎও এখন হুমকির মুখে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের কারণে অভিবাসন নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে।
কিছু জনপ্রতিনিধি ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিতাড়ন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এই অভিবাসীরা কোনো ধরনের সাহায্য চায় না, বরং তারা এখানে কাজ করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে চায়।
ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি বিবেচনায়, ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ তাদের দেশ ছেড়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই প্রথমে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়, কিন্তু পরবর্তীতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পা বাড়ায়।
ডোর্যালে আসা এই অভিবাসীদের মধ্যে যেমন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকও। তাদের মধ্যে ডাক্তার, আইনজীবী, নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীও রয়েছেন।
ডোর্যালে বসবাসকারী ভেনেজুয়েলার আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক কারেনো জানান, এখানকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
তিনি বলেন, “আসলে কি ঘটবে, তা আমরা জানি না। এখানকার মানুষজন হয় ভেনেজুয়েলায় ফিরতে চায় না, অথবা সেখানকার পরিস্থিতির কারণে ফিরতে পারে না।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস