শিরোনাম: অল্প ওজনের জন্ম, ৮১ দিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা: আমেরিকার দম্পতির লড়াই
ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী কারিনা আথিয়াসের কোল আলো করে জন্ম নেওয়া একরত্তি শিশুর গল্প এটি।
নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে, ২৭ সপ্তাহে জন্ম হয় ছোট্ট কেটের।
জন্মের সময় তার ওজন ছিল মাত্র ১ পাউন্ডের বেশি, যা বাংলাদেশি হিসেবে প্রায় আধা কিলোগ্রামের কাছাকাছি।
জন্মের পর কেটকে ৮১ দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) কাটাতে হয়েছে।
অবশেষে, সব প্রতিকূলতা জয় করে সে এখন সুস্থ, আর বাড়ি ফিরে গেছে বাবা-মায়ের কাছে।
কেট-এর মা কারিনা একজন নার্স।
গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের এবং অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন।
সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু ২৪ সপ্তাহের মাথায় কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।
চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসোনোগ্রাম করানোর পর জানা যায়, তার জরায়ুর মুখ খুব দ্রুত খুলতে শুরু করেছে, যার ফলে অনাগত সন্তানের জন্মের সম্ভাবনা দ্রুত বাড়ছে।
দ্রুত ব্যবস্থা হিসেবে তাকে বিশ্রামে থাকার নির্দেশ দেন চিকিৎসক।
ডিসেম্বরের শুরুতেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় কারিনাকে।
এরপর ২৬ ডিসেম্বর, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই কেটের জন্ম হয়।
জন্মের পর পরই তাকে এনআইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়।
এনআইসিইউ (Neonatal Intensive Care Unit) হলো নবজাতকদের বিশেষ যত্ন কেন্দ্র, যেখানে অপরিণত বা অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে।
ছোট্ট কেট-কে যখন প্রথমবার দেখেন কারিনা ও তার স্বামী নাথান, তখন তাদের চোখে জল এসে গিয়েছিল।
তারা জানান, সন্তানের কান্না শোনার পরে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন।
কেটের বাবা-মা দুজনেই জানান, হাসপাতালে কেটকে রেখে আসাটা তাদের জন্য ছিল সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত।
প্রতিদিন তারা এনআইসিইউ-তে যেতেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে।
চিকিৎসকরা জানান, জন্মের পর বেশ কয়েকবার কেটের শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল।
সেই সময় নার্সরা তাকে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে সাহায্য করতেন।
ধীরে ধীরে কেটের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।
ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজে থেকে শ্বাস নিতে ও বোতল থেকে দুধ পান করতে শুরু করে।
হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কেট ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।
অবশেষে, যখন তার ওজন ৫ পাউন্ড (প্রায় ২.২৭ কিলোগ্রাম)-এ পৌঁছায়, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি ‘বিদায় সংবর্ধনা’র আয়োজন করে।
মা-বাবার চোখে তখন আনন্দের অশ্রু।
তাদের অনুভূতি ছিল, যেন কেট এক বিশাল যুদ্ধ জয় করেছে।
কারিনা জানান, এই পুরো সময়টা তাদের জন্য খুব কঠিন ছিল।
তবে এখন তারা দুজনেই খুব খুশি।
তিনি বলেন, “শুরুতে কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ দেখা কঠিন ছিল, কিন্তু যখন সব শেষ হয়, তখন এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু থাকে না।”
ছোট্ট কেটের এই জয়যাত্রা অন্যদের কাছেও এক দৃষ্টান্ত।
এটি মা-বাবার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সঠিক চিকিৎসা এবং ভালোবাসার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
তথ্য সূত্র: পিপলস