ইউরোপের গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিল মাইক্রোসফট

ইউরোপে তাদের কার্যক্রম রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিল মাইক্রোসফট, সেই সঙ্গে ডেটা সেন্টার সম্প্রসারণের ঘোষণা।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট ইউরোপে তাদের ডেটা সেন্টার পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মার্কিন সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করার অঙ্গীকার করেছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় গ্রাহকদের মধ্যে, বিশেষ করে সরকারের মধ্যে, ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এই উদ্বেগের কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য সম্পর্ক এবং বিভিন্ন নীতিগত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা।

এমন পরিস্থিতিতে মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপ গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ ব্রাসেলসে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে বলেন, ইউরোপীয় গ্রাহকরা যেন তাদের উপর ভরসা রাখতে পারে, সেই বিষয়ে তারা নিশ্চিত করতে চান। তিনি আরও বলেন, “যদি এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে বিশ্বের অন্য কোনো সরকার আমাদের ইউরোপে ক্লাউড পরিষেবা বন্ধ করতে বলে, তবে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এবং দৃঢ়ভাবে এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাব।”

মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইতোমধ্যেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বারাক ওবামার প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা লড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

ব্র্যাড স্মিথ উল্লেখ করেন, কোনো কারণে যদি তারা হেরে যায়, সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় অংশীদারদের জন্য সুইজারল্যান্ডে কম্পিউটার কোড সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, যেন তারা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।

এই ঘোষণার পাশাপাশি, মাইক্রোসফট ইউরোপে তাদের ডিজিটাল কার্যক্রম আরও জোরদার করতে চাইছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে তারা ডেটা সেন্টারের ক্ষমতা ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে এবং ১৬টি দেশে ডেটা সেন্টার স্থাপন করবে।

এই খাতে বার্ষিক কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। তবে, ঠিক কত পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি ব্র্যাড স্মিথ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে প্রযুক্তি ও ডেটা সার্বভৌমত্বের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা চাইছে, বড় মার্কিন ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারীদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা হোক।

এই পরিস্থিতিতে মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্র্যাড স্মিথ বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইউরোপীয় সরকারগুলো অতিরিক্ত বিকল্প নিয়ে ভাবছে।” তিনি আরও যোগ করেন, মাইক্রোসফট ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউরোপে ডেটা সেন্টার সম্প্রসারণ এবং আইনি লড়াইয়ের অঙ্গীকারের মাধ্যমে মাইক্রোসফট একদিকে যেমন তাদের গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে চাইছে, তেমনই ডেটা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ক্লাউড সেবার ব্যবহার বাড়ছে।

তাই, ডেটা নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের এই বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *