ডিজিটাল দুনিয়ায় মানুষের সহায়ক হিসেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর ব্যবহার বাড়ছে, এবং এই ক্ষেত্রে নতুনত্ব যোগ করতে প্রস্তুত টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট। সম্প্রতি তারা ‘মিকো’ (Mico) নামের একটি নতুন এআই চরিত্র উন্মোচন করেছে, যা তাদের ভার্চুয়াল সহকারী ‘কোপাইলট’-এর সঙ্গে যুক্ত হবে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের এআই চ্যাটবটগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করছে। মিকো দেখতে অনেকটা কার্টুন চরিত্রের মতো, যা ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথোপকথনের সময় বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ, দুঃখের কোনো কথা শুনলে মিকোর মুখচ্ছবি বদলে যাবে। মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ‘অনুভূতিপূর্ণ’ এআই সহযোগী তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
তবে, মাইক্রোসফটের এই নতুন পদক্ষেপের আগে, তাদের পুরনো একটি প্রচেষ্টা ছিল, যা ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে ‘ক্লিপ্পি’ নামের একটি এআই সহকারী চালু করা হয়েছিল, যা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিত।
কিন্তু এর অতিরিক্ত সক্রিয়তা ব্যবহারকারীদের বিরক্তির কারণ হয়। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেই সময়ের ব্যবহারকারীরা এ ধরনের প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।
বর্তমানে, এআই প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
বর্তমানে, বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি তাদের এআই সহকারী তৈরিতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। কেউ কেউ মুখবিহীন প্রতীক ব্যবহার করছে, আবার কেউ মানব-সদৃশ অবতার তৈরি করছে।
মাইক্রোসফট এক্ষেত্রে একটি মাঝামাঝি পথ বেছে নিয়েছে, যা বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু অতিরিক্ত আকর্ষণীয় নয়। তাদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারকারীর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করাই মূল উদ্দেশ্য।
এই প্রসঙ্গে, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (MIT)-এর গবেষক ব্রায়ান রাইমার বলেন, “এআই ডেভেলপাররা তাদের ব্যবহারকারীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সহকারী তৈরি করেন।
প্রযুক্তি-সচেতন ব্যবহারকারীরা হয়তো মেশিনের মতো আচরণ আশা করেন, কিন্তু যারা প্রযুক্তির ওপর কম নির্ভরশীল, তাদের জন্য মানবিক গুণসম্পন্ন এআই বেশি উপযোগী।”
মাইক্রোসফটের এই নতুন এআই-এর ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে, যা ব্যবহারকারীর জন্য ‘প্রকৃতপক্ষে উপযোগী’ হবে।
এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, ব্যবহারকারীকে সঠিক তথ্য দিয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা, এবং তাদের পক্ষপাতকে সমর্থন না করা।
এই মুহূর্তে, যুক্তরাষ্ট্রে কোপাইলট ব্যবহারকারীরা মিকোর সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। এটি তাদের ল্যাপটপ ও মোবাইল অ্যাপে উপলব্ধ।
ব্যবহারের সময় মিকো রঙ পরিবর্তন করতে পারে, চশমা পরতে পারে এবং ‘স্টাডি’ মোডেও যেতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী, এটিকে বন্ধ করারও সুযোগ রয়েছে, যা ক্লিপ্পির থেকে একটি বড় পরিবর্তন।
অন্যদিকে, অন্যান্য এআই কোম্পানিগুলোও তাদের চ্যাটবটের চরিত্র গঠনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ওপেনএআই (OpenAI)-এর প্রধান স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, তাদের ChatGPT-তে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হবে।
তবে, এআই ব্যবহারের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি, ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) কয়েকটি সামাজিক মাধ্যম ও এআই কোম্পানির বিরুদ্ধে শিশুদের ওপর তাদের এআই চ্যাটবটের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
বাংলাদেশেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার বাড়ছে। শিক্ষা, ব্যবসা ও অন্যান্য খাতে এর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
তবে, এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ডিজিটাল সাক্ষরতা ও নৈতিক ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। এআই-এর ভালো-মন্দ দুটো দিকেই খেয়াল রেখে, এর সুবিধাগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে, যাতে এটি দেশের উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস