আসছে মধ্য-শরৎ উৎসব! চাঁদ, ফানুস আর উৎসবে মাতোয়ারা!

আসুন, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উৎসব, মধ্য-শরৎ উৎসব (Mid-Autumn Festival) সম্পর্কে কিছু জানা যাক। এই উৎসবটি মূলত পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পালিত হয়, যেখানে পরিবার একসাথে মিলিত হয়, ফসল কাটার আনন্দ উদযাপন করে, ফানুস ওড়ায় এবং বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল চাঁদ উপভোগ করে।

এটি “মুন ফেস্টিভাল” নামেও পরিচিত। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে, জানা যায় এই উৎসবের সূচনা হয় চীনের তাং রাজবংশের (Tang Dynasty) আমলে (৬১৮-৯০৭ খ্রিস্টাব্দ)।

যদিও এর সঠিক ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে অনেকের মতে, কনফুসিয়াসের “বুক অফ রাইটস” (Book of Rites) নামক গ্রন্থে এই উৎসবের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে সম্রাটদের চাঁদকে উৎসর্গীকৃত হয়ে ফসল উৎসব পালনের কথা বলা হয়েছে।

এই উৎসবের একটি প্রধান আকর্ষণ হল পরিবারের মিলন। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এই দিনে “মানুষ এবং চাঁদ একত্রিত হয়ে একটি পূর্ণ বৃত্ত তৈরি করে”।

উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা কল্পকাহিনী। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি গল্প হল, “চাঁদের দেবী” খ্যাত চাং’এর (Chang’e) কাহিনী।

কিংবদন্তি অনুসারে, চীনের বীর যোদ্ধা হাউ ই (Hou Yi) যখন অতিরিক্ত সূর্যকে ধ্বংস করে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলেন, তখন তিনি স্বর্গের অমৃত পান করার সুযোগ পান। কিন্তু তার স্ত্রী চাং’এ সেই অমৃত পান করে চাঁদে চলে যান।

এরপর থেকে প্রতি বছর, যখন চাঁদ পূর্ণিমার আলো ছড়ায়, হাউ ই তার স্ত্রীর ছায়া দেখার জন্য উৎসবের আয়োজন করতেন। চীনের মহাকাশ কর্মসূচিতেও এই কাহিনীর প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে, যেখানে “চ্যাং’এ” নামে চন্দ্রাভিযানগুলি পরিচালনা করা হয়।

মধ্য-শরৎ উৎসব পালনের রীতি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনামে এই দিনটি শিশুদের জন্য উৎসর্গীকৃত এবং সেখানে কাগজের লণ্ঠন মেলা ও ড্রাগন নাচের মতো উৎসব হয়।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলে, লোকেরা লণ্ঠন জ্বালায় এবং পমেলো ও স্টার ফ্রুটের মতো ফল উপভোগ করে। হংকং-এর কিছু গ্রামে এখনো ফায়ার ড্রাগন নাচের ঐতিহ্য বিদ্যমান।

দক্ষিণ কোরিয়ায়, এই উৎসব “চুসোক” নামে পরিচিত এবং এটি তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ছুটির দিন। এই সময়ে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের সমাধিস্থল পরিষ্কার করে, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে এবং মিষ্টি পুর ভরা অর্ধচন্দ্রাকৃতির চালের পিঠা “সংপিয়ন” (songpyeon) তৈরি করে।

জাপানে, লোকেরা “তসুকিমি দাঙ্গো” (tsukimi dango) নামে পরিচিত মিষ্টিযুক্ত চালের বল তৈরি করে চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করে। এই উৎসব এখন সারা বিশ্বে, এমনকি নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে শুরু করে ভ্যাঙ্কুভার পর্যন্ত এশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পালিত হয়।

এই উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল “মুনকেক” (mooncake)। এটি অনেকটা আমাদের দেশের পিঠার মতো, যা বন্ধু এবং পরিবারের মধ্যে ভাগ করে খাওয়া হয়।

সবচেয়ে পরিচিত মুনকেক তৈরি করা হয় লোটাস বীজের পেস্ট, নোনতা ডিমের কুসুম এবং লার্ড দিয়ে। একটি মাঝারি আকারের মুনকেকে প্রায় ১০০০ ক্যালোরি পর্যন্ত থাকতে পারে।

বাদাম, লাল শিম এবং কাস্টার্ডও মুনকেকের জনপ্রিয় উপাদান। চীনের গুইয়াং শহরে, একটি হাসপাতালের ক্যান্টিন তাদের নিজস্ব রেসিপিতে তৈরি মুনকেক বিক্রি করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

শানতুং প্রদেশের জিন্তাই শহরে, মুনকেক তৈরি করে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৯০০ কোটি টাকার সমান, তবে বিনিময় হারের তারতম্যের কারণে এই সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে) আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বিভিন্ন বেকারি এখন আধুনিক মুনকেক তৈরি করছে, যেখানে আইসক্রিম এবং চকলেটের প্রলেপ ব্যবহার করা হয়।

মধ্য-শরৎ উৎসব একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উৎসব, যা বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে একতা ও আনন্দ নিয়ে আসে। এই উৎসবের মাধ্যমে পরিবার ও সমাজের বন্ধন আরও দৃঢ় হয় এবং প্রকৃতির প্রতি মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *