গর্ভপাতের পিল: নতুন দায়িত্বে আসা এফডিএ প্রধানের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে

যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের ওষুধ, ‘মিফেপ্রিস্টোন’ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক।

যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের জন্য বহুলভাবে ব্যবহৃত একটি ওষুধ, ‘মিফেপ্রিস্টোন’-এর নিরাপত্তা ও ব্যবহার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি দেশটির খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন বিভাগের (এফডিএ) প্রধান হিসেবে ড. মার্টি মাকারিকে নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই এই আলোচনা জোরালো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সিনেটে শুনানিতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের সদস্যদের জিজ্ঞাসার জবাবে মিফেপ্রিস্টোন বিষয়ক কোনো নির্দিষ্ট পদক্ষেপের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি ড. মাকারি।

গর্ভনিরোধক এই ওষুধটি সাধারণত মিসোপ্রোস্টলের সঙ্গে সেবন করা হয়। এটি ওষুধ সেবনের মাধ্যমে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে যত গর্ভপাত হয়, তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই এই পদ্ধতির মাধ্যমে হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা ‘মিফেপ্রিস্টোন’-কে “সবচেয়ে নিরাপদ ঔষধগুলোর মধ্যে অন্যতম” হিসেবে উল্লেখ করেন।

তবে, কিছু রক্ষণশীল খ্রিস্টান সংগঠন এই ওষুধের কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে দাবি করে এফডিএর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের মতে, এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে “হাজার হাজার” রোগীর স্বাস্থ্যগত জটিলতা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) ২০০০ সালে মিফেপ্রিস্টোনকে গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে নিরাপদ ও কার্যকরী উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোর ওষুধ হিসেবে অনুমোদন দেয়। বর্তমানে, এটি সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অনলাইনে পাওয়া যায় এবং ডাকযোগে সরবরাহ করা যায়। তবে, প্রথম দিকে এফডিএ ওষুধটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু কঠোর নিয়ম জারি করেছিল।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে, রোগীদের তিনটি সাক্ষাৎকারের পরেই এই ওষুধ সেবনের অনুমতি ছিল। এছাড়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে জরুরি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা রাখতে হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এফডিএ মিফেপ্রিস্টোনের নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং ব্যবহারের বিধিনিষেধ শিথিল করে।

গর্ভপাত বিরোধীদের মতে, ২০২১ সালে এফডিএ অনলাইনে প্রেসক্রিপশন ও ডাকযোগে ওষুধ সরবরাহের অনুমতি দেওয়ার ফলে জটিলতা বেড়েছে। তবে চিকিৎসকদের মতে, মিফেপ্রিস্টোন ব্যবহারের কারণে সামান্য সংখ্যক রোগীর “গুরুতর” বা “মারাত্মক” স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টসসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সংগঠনের করা একটি আইনি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ওষুধের মাধ্যমে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা—যেমন সংক্রমণ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, বা হাসপাতালে ভর্তি—০.৩২ শতাংশের কম রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুরুতর প্রতিক্রিয়ার সংজ্ঞা হলো—রক্ত পরিসঞ্চালন, বড় ধরনের অস্ত্রোপচার, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু। মিফেপ্রিস্টোন সেবনের পর রোগীদের জরুরি বিভাগে যাওয়ার ঘটনা ২.৯% থেকে ৪.৬% পর্যন্ত দেখা গেছে। তবে, জরুরি বিভাগে যাওয়া মানেই সবসময় বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে, এমনটা নাও হতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী উসমা উপাধ্যায় বলেন, “অনেকে হয়তো পরীক্ষা করাতে বা অন্য কোনো জিজ্ঞাসা নিয়ে সেখানে যান। আবার অনেকে হয়তো গর্ভপাতের বিষয়টি গোপন রাখতে চান বলে সরাসরি ডাক্তারের কাছে যান না।”

গবেষণায় দেখা গেছে, জরুরি বিভাগে যাওয়া রোগীদের অর্ধেকের বেশি পর্যবেক্ষণের পরই বাড়ি ফিরে যান।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মিফেপ্রিস্টোন ব্যবহারের ফলে ৯৭.৪% ক্ষেত্রে গর্ভপাত সম্পন্ন হয়। তবে ২.৬% ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। আর ০.৭% ক্ষেত্রে গর্ভধারণ অব্যাহত থাকে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে জটিলতার সম্ভাবনা খুবই কম। তাঁরা আরও জানান, অস্ত্রোপচারের সময় অথবা পরে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে গর্ভপাত সম্পূর্ণ হয়েছে।

মিফেপ্রিস্টোনের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা অন্যান্য সাধারণ ওষুধের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বিষণ্ণতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ সাধারণত ৪০% থেকে ৬০% রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর হয়। এফডিএ অনুমোদিত নতুন অ্যান্টিবায়োটিকগুলো প্রায় ৭০% সংক্রমণ ভালো করতে পারে।

এফডিএ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ রোগী মিফেপ্রিস্টোন গ্রহণ করেছেন। ২০২১ সালে করা এক সমীক্ষায়, এই ওষুধের কারণে হওয়া মৃত্যুর হার ০.০০০০২৭% পাওয়া গেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *