মাথাব্যথা, বিশেষ করে তীব্র মাইগ্রেনের যন্ত্রণা, অনেক মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। সাধারণ কিছু কারণের বাইরেও এমন কিছু বিষয় আছে যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না, কিন্তু যা মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।
আসুন, তেমনই কিছু অপ্রত্যাশিত কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক যা হয়তো আপনারও কাজে আসতে পারে।
প্রথমে আসা যাক আমাদের অতি পরিচিত কিছু সমস্যার কথায়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা মাইগ্রেনের অন্যতম প্রধান কারণ।
পরীক্ষার চাপ, অফিসের কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যা—এগুলো আমাদের দেশে খুবই সাধারণ। এই চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অনেক সময় দেখা যায়, মাথাব্যথা শুরু হয়।
একে বলা হয় ‘রিলিফ মাইগ্রেন’। অর্থাৎ, চাপ কমার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কিছু পরিবর্তন হয়, যা মাথাব্যথাকে ডেকে আনে।
শুধু চাপ নয়, আবহাওয়ার পরিবর্তনও অনেকের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত গরম বা রোদ অনেক সময় শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যারা দিনের বেলা বাইরে কাজ করেন।
অতিরিক্ত গরমে ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতাও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। গরমকালে বাইরে কাজ করার সময় তাই পর্যাপ্ত জল পান করা এবং বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাসও মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। যেমন, সুগন্ধীযুক্ত কিছু জিনিস, যেমন—সেন্ট দেওয়া বর্জ্য ফেলার ব্যাগ বা মশলার ধোঁয়া অনেকের মাথাব্যথার কারণ হয়।
এছাড়া, অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো, বিশেষ করে এলইডি লাইট বা ফ্লুরোসেন্ট আলো অনেকের জন্য সমস্যা তৈরি করে। যাদের এই ধরনের সমস্যা আছে, তারা কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় চোখের দিকে খেয়াল রাখতে পারেন, প্রয়োজনে অ্যান্টি-গ্লেয়ার চশমা ব্যবহার করতে পারেন।
শারীরিক কিছু সমস্যাও মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। দাঁতের সমস্যা, যেমন—দাঁত বাঁকা হওয়া বা মাড়ির সংক্রমণ থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে।
অনেক সময় চোয়ালের পেশীর অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেও এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। যারা দাঁত দিয়ে নখ কাটেন বা অতিরিক্ত চুইংগাম খান, তাদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি হতে পারে।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি। এর ফলে ঘাড় ও কাঁধে ব্যথার সৃষ্টি হয়, যা ‘টেক নেক’ নামে পরিচিত।
এই ভুলের কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। তাই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।
মহিলাদের ক্ষেত্রে, হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে। বিশেষ করে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে অনেক মহিলার মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে হরমোনের পরিবর্তন হয়, যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
যারা ঘন ঘন ভ্রমণের করেন, তাদের ক্ষেত্রেও মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘুমের অভাব, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং উচ্চতার কারণে অনেক সময় এই ধরনের সমস্যা হয়।
ভ্রমণের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে প্রচুর জল পান করা প্রয়োজন।
যদি আপনার ঘন ঘন মাথাব্যথা হয়, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কারণ, প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের কারণ ভিন্ন হতে পারে। সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তথ্য সূত্র: পিপল