যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (National Security Advisor – এনএসএ) পদ থেকে সম্প্রতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাইক ওয়াল্টজকে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিওকে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
জানা গেছে, ওয়াল্টজকে জাতিসংঘের পরবর্তী দূত হিসেবে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। যদিও এই পদে তার নিয়োগের জন্য সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “মাইক ওয়াল্টজ আমাদের জাতির স্বার্থকে সবার আগে রেখেছেন এবং আমি জানি, তিনি নতুন দায়িত্বেও একই কাজ করবেন।”
ওয়াল্টজের এই পদচ্যুতির কারণ হিসেবে হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরীণ কিছু ঘটনাকে দায়ী করা হচ্ছে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘সিগনালগেট’ বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, তিনি অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি ‘সিগনাল’ মেসেজিং গ্রুপ তৈরি করেছিলেন, যেখানে সামরিক পরিকল্পনাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্সহ আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই গ্রুপের সদস্য ছিলেন। তবে, একটি ভুলের কারণে সেই চ্যাট প্রকাশ্যে চলে আসে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
এছাড়াও, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে ওয়াল্টজের কঠোর নীতি এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষয়টিও ট্রাম্পের মনঃপূত হয়নি বলে জানা যায়।
ইরানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ওয়াল্টজের ভিন্নমত ছিল এবং তিনি দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে ছিলেন।
ওয়াল্টজের পাশাপাশি হোয়াইট হাউজের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছেন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যালেক্স ওয়াং। ট্রাম্পের আগের মেয়াদেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ওয়াল্টজের অপসারণের পেছনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নীতিগত ভিন্নতা এবং আনুগত্যের অভাবকেও অনেকে দায়ী করছেন।
বিশেষ করে, ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (Make America Great Again – MAGA) শিবিরের অনেকের কাছে ওয়াল্টজের কর্মকাণ্ড প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্যের অভাব হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
অন্যদিকে, ওয়াল্টজকে সমর্থন করে অনেকে বলছেন, এই পরিবর্তন আসলে তার জন্য কোনো পদাবনতি নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
এর মাধ্যমে তিনি নতুন কূটনৈতিক ভূমিকায় থেকে প্রশাসনকে আরও ভালোভাবে সেবা দিতে পারবেন।
মার্কো রুবিও, যিনি বর্তমানে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন, তাকে অন্তর্বর্তীকালীন এনএসএ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে পররাষ্ট্র নীতিতে নেতৃত্ব সংহত করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭০-এর দশক থেকে এই প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই সঙ্গে এনএসএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভবিষ্যতে ওয়াল্টজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে স্টিফেন মিলার, স্টিভ উইটকফ এবং রিক গ্রিনেলের মতো ব্যক্তিদের নাম শোনা যাচ্ছে।
তারা সবাই ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওয়াল্টজ এর আগে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি সামরিক কৌশল নিয়েও লেখালেখি করেছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা