ফিলিস্তিনি নাট্যদল ‘খাশাবি’র পরিবেশনায় ‘মিল্ক’ – মাতৃত্বের গভীর শোকগাথা।
ফিলিস্তিনি নাট্যদল খাশাবির নতুন প্রযোজনা ‘মিল্ক’ যেন শোকের এক নীরব প্রতিচ্ছবি। মঞ্চে এক নারীর আর্তনাদ, হারানোর বেদনা আর মাতৃত্বের চিরায়ত রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মা ও শিশুর সম্পর্ক, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের নারীদের সীমাহীন কষ্ট, আর শোকের ভাষা – সবকিছুই যেন এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে এই নাটকে।
নাটকটি মূলত মায়েদের ভেতরের গভীর শোককে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। যেখানে যুদ্ধের বিভীষিকা কেড়ে নিয়েছে তাদের সন্তানদের। মঞ্চে দেখা যায়, ক্ষত-বিক্ষত শরীরে, কখনও বা ছিন্ন মস্তিস্ক নিয়ে নারীরা তাদের সন্তানদের ধরে আছেন। যেন তারা তাদের চিরন্তন ভালোবাসার প্রতীক।
নীরবতার মাঝে যেন কথা বলতে চাইছে অনেক নারী, কিন্তু শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। দর্শকদের মনে হয়, যেন তারা কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেছে। কারণ, মাতৃত্বের এই গভীর ক্ষতকে ভাষায় প্রকাশ করা কি সম্ভব?
২০২২ সালে বাশার মুরকাস-এর মস্তিষ্কপ্রসূত এই নাটকটি সম্ভবত বর্তমান সময়ে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি শিশুদের নিহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে নাটকটির প্রাসঙ্গিকতা, যেন ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান সহিংসতার এক প্রতিচ্ছবি।
এখানে যুদ্ধের রাজনৈতিক দিক নয়, বরং যুদ্ধের কারণে মায়েদের মনোজগতে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়, তাই প্রধান বিষয়। পরিচালক বাশার মুরকাস এবং প্রযোজক খুলুদ বাসেলের এই কাজটি দর্শকদের এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়, যেখানে শোকের পুনরাবৃত্তি ঘটে, যা কখনও শেষ হয় না। মাতৃত্বের প্রতীক হিসেবে এখানে দুধের ব্যবহার বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
একদিকে যেমন এটি জীবনের প্রতীক, তেমনি মৃত্যুর মুখে এই দুধের অপচয় গভীর বেদনার জন্ম দেয়।
নাটকের মঞ্চসজ্জা, আলোর ব্যবহার এবং আবহসংগীত দর্শকদের এক ভিন্ন জগৎ-এ নিয়ে যায়। মাজদালা খোরির সেট ডিজাইন যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের এক সার্বিক চিত্র ফুটিয়ে তোলে। মঞ্চের শূন্যতা যেন গাজার ধ্বংসস্তূপের প্রতিচ্ছবি, যেখানে ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপের প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।
মুয়াজ আল জুবের আলো এবং রেমন্ড হাদ্দাদের সঙ্গীত এই নাটকের মর্মস্পর্শী আবেদন আরও বাড়িয়ে তোলে।
‘মিল্ক’-এ অভিনয় করেছেন সালওয়া নাক্কারা, রিম তালহামি, শাদেন কানবৌরা, সামা ওয়াকিম, ফিরিয়েল আল জুবাহ এবং সামেরা কাদরি সহ আরও অনেকে। তাদের অসাধারণ অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে।
নীরবতা, শোক এবং বেদনার এক গভীর চিত্র তারা ফুটিয়ে তুলেছেন।
লন্ডনের সাউথ ব্যাংক সেন্টারে আগামী ২৫ মে পর্যন্ত এই নাটকটি প্রদর্শিত হচ্ছে। যুদ্ধের বিভীষিকা, শোক, আর মাতৃত্বের এমন গভীর চিত্র সম্ভবত দর্শকদের হৃদয়ে এক গভীর দাগ কাটে।
তথ্যসূত্র: The Guardian