রহস্যময় সমুদ্র: বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন আলো ছড়ানো সমুদ্রের রহস্য, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
সমুদ্রের বুকে হঠাৎ আলোর ঝলকানি, যা রাতের আঁধারে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এই আলো সাধারণত আসে বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে, যা ‘মিল্কি সি’ (Milky Sea) নামে পরিচিত।
শত শত বছর ধরে নাবিকেরা এই আলোময় সমুদ্রের সাক্ষী থেকেছেন, কিন্তু এর কারণ ছিল অজানা। সম্প্রতি, কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির (Colorado State University) গবেষকরা এই বিরল ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে, এই আলোকরশ্মির উৎস এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
গবেষকরা বহু পুরনো নথিপত্র, জাহাজের লগবুক, এবং উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে ‘মিল্কি সি’-র ওপর একটি বৃহৎ ডেটাবেস তৈরি করেছেন। তাঁদের এই গবেষণা ‘আর্থ অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় জানা গেছে, এই আলো সাধারণত ‘ভাইব্রীয়ো হার্ভেয়ী’ (Vibrio harveyi) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি আলো তৈরি করে যা বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে, কখনো কখনো কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এমনকি মহাকাশ থেকেও এই আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায়।
ঐতিহ্যগতভাবে, এই ‘মিল্কি সি’ ঘটনাগুলো ভারত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। গবেষকরা দেখেছেন, জলবায়ুর কিছু বিশেষ অবস্থার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে।
যেমন, ‘লা নিনা’ (La Niña) পরিস্থিতিতে গ্রীষ্মকালে এবং ‘ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোল’-এর (Indian Ocean Dipole) সময় শীতকালে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। এছাড়াও, শক্তিশালী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবেও সমুদ্রের গভীরে থাকা পুষ্টি উপাদান উপরে উঠে আসার কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মিল্কি সি’-র এই বৃদ্ধি সম্ভবত সমুদ্রের স্বাস্থ্যের অবনতির ইঙ্গিত দেয়। কারণ, ‘ভাইব্রীয়ো হার্ভেয়ী’ ব্যাকটেরিয়া মাছের জন্য ক্ষতিকর।
যদি এই ঘটনাগুলো বাড়তে থাকে, তবে তা বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলোর মৎস্য শিল্পের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা এবং মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা এই বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
গবেষকরা মনে করেন, এই ডেটাবেস ‘মিল্কি সি’-র পূর্বাভাস দিতে এবং এর কারণগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, যাতে সমুদ্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় এবং মৎস্য সম্পদের উপর এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কমানো যায়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক