মিলওয়াকিতে স্কুল বন্ধ: শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলওয়াকি শহরের স্কুলগুলোতে সিসা দূষণের কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। পুরনো স্কুল ভবনগুলোতে ক্ষয়ে যাওয়া রং থেকে এই দূষণ ছড়াচ্ছে, যা শিশুদের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় শহর কর্তৃপক্ষ একাধিক স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে এবং দূষণ প্রতিরোধের জন্য নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

মিলওয়াকির স্কুলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই পুরনো ভবনগুলোতে ব্যবহৃত সিসাযুক্ত রং নিয়ে উদ্বেগ ছিল। এই রং ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে তা শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে এবং তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়।

সম্প্রতি, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর শরীরে সিসার উপস্থিতি ধরা পড়ার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে, শহরের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, আরও বেশ কয়েকটি স্কুলে সংস্কার কাজ চলছে।

জানা গেছে, এই বছর মোট নয়টি স্কুলে সিসা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে, শহর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলো মেরামতের জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ভবনগুলোতে সিসাযুক্ত রং পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে তা অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, স্কুলের কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

সিসা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে এটি বাধা সৃষ্টি করে।

এর ফলে শিশুদের শেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া, মনোযোগের অভাব, এবং আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কারণে, মিলওয়াকি কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উৎসাহিত করছে।

শহরের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, তারা শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পের আয়োজন করছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) -এর সহায়তা চেয়েছিল মিলওয়াকি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সিডিসি তাদের জনবল সঙ্কটের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সিডিসি’র লিড পয়জনিং প্রিভেনশন প্রোগ্রাম-এ অর্থ বরাদ্দ কমে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে।

মিলওয়াকির এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বাংলাদেশেও পুরনো বাড়িঘর ও শিল্প-কারখানায় সিসাযুক্ত রং ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।

শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদেরও সচেতন হতে হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

মিলওয়াকির শিক্ষা বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, তারা আগামী শিক্ষাবর্ষের আগেই ১৯৫০ সালের আগে নির্মিত প্রায় ৫৪টি স্কুল এবং ১৯৫০ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে নির্মিত ৫২টি স্কুলে এই সংস্কার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করছেন।

শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। একই সাথে, অভিভাবকদেরও সচেতন থাকতে হবে এবং শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *