মিসৌরিতে আবারও বন্ধ হলো গর্ভপাত পরিষেবা, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর।
যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে গর্ভপাত পরিষেবা আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নভেম্বরে সেখানকার ভোটাররা গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার পরেও এমনটা ঘটল। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নিম্ন আদালতকে আগের রায়গুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে। এর আগে, নিম্ন আদালত গর্ভপাত চালু রাখার পক্ষে রায় দিয়েছিল। মিসৌরির শীর্ষ আদালত মনে করে, নিম্ন আদালত ডিসেম্বরের এবং ফেব্রুয়ারীর রায় দেওয়ার সময় ভুল মানদণ্ড ব্যবহার করেছে।
২০২২ সালে ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার রায় বাতিল হওয়ার পর থেকে মিসৌরিতে প্রায় সব ধরনের গর্ভপাত বন্ধ ছিল। মঙ্গলবারের রায়ে আদালত বিচারক জেরি ঝ্যাংকে আগের রায় বাতিল করে নতুন মানদণ্ড অনুযায়ী মামলার রায় দিতে বলেছে। বিচারক ঝ্যাংয়ের মতে, গর্ভপাত চালু রাখার পক্ষে সমর্থন বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, গর্ভপাত চালু থাকলে কোনো ক্ষতি হবে কিনা, তা আগে বিবেচনা করতে হবে।
রাজ্য সরকার মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে জানিয়েছিল, গর্ভপাত পরিষেবা প্রদান অব্যাহত থাকলে নারীদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে, এমনটা প্রমাণ করতে পারেনি প্ল্যানড প্যারেন্টহুড। তারা আরও জানায়, ঝ্যাঙের সিদ্ধান্তগুলোর কারণে গর্ভপাত কেন্দ্রগুলো কার্যত অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিল, যেখানে নারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।
গর্ভপাত কেন্দ্রগুলোর পরিচ্ছন্নতার মান এবং যে সব চিকিৎসক গর্ভপাত করেন, তাদের কিছু নির্দিষ্ট হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থাকার নিয়ম শিথিল করা হয়েছিল।
মিসৌরির অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান্ড্রু বেইলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “মিসৌরি সুপ্রিম কোর্টের আজকের সিদ্ধান্ত নারী ও শিশুদের জন্য জয়। এর মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, গর্ভপাত প্রদানকারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে রাজ্যের আইন মেনে চলতে হবে।”
প্ল্যানড প্যারেন্টহুডের মতে, এই বিধিনিষেধগুলো বিশেষভাবে গর্ভপাতের সুযোগ সীমিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
প্ল্যানড প্যারেন্টহুড গ্রেট প্লেইনসের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও এমিলি ওয়েলস জানিয়েছেন, মিসৌরির একমাত্র গর্ভপাত ক্লিনিকগুলোর কর্মী রোগীদের ফোন করে তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করতে শুরু করেছেন।
ওয়েলস বলেন, “আমরা এর আগেও মিসৌরির রোগীদের ফোন করে জানিয়েছি যে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, নতুন বিধিনিষেধ এবং রাজ্যের লাইসেন্সিং জটিলতার কারণে তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়েছে। জনগণের গর্ভপাতের অধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে ভোট দেওয়ার পরও, আবারও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হওয়ায় আমরা হতাশ।”
ওয়েলস আরও জানান, প্ল্যানড প্যারেন্টহুড খুব শীঘ্রই আদালতে ফিরতে চায়।
অন্যদিকে, ‘ক্যাম্পেইন লাইফ মিসৌরি’র পরিচালক স্যাম লি সুপ্রিম কোর্টের আদেশে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বলেন, “এর মানে হলো, আমাদের গর্ভপাত বিরোধী আইন বহাল থাকবে, যার মধ্যে নারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য অনেক সুরক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে কতদিন পর্যন্ত এটি বহাল থাকবে, তা দেখতে হবে।”
উল্লেখ্য, মিসৌরি একমাত্র রাজ্য যেখানে ভোটাররা সরাসরি ভোটে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। তবে রাজ্য সরকার এখনও এই বিষয়ে আদালতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে, আইনপ্রণেতারা আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন, যেখানে ধর্ষণের কারণে হওয়া গর্ভধারণের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি সম্ভবত ২০২৬ সাল অথবা তার আগে ভোটাভুটিতে যেতে পারে।
মঙ্গলবারের এই রায়ের আগে, ১২টি রাজ্যে সব ধরনের গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল এবং আরও চারটি রাজ্যে গর্ভধারণের প্রায় ছয় সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা অনেক নারীর কাছে তাদের গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানার আগেই ঘটে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন