ছবি: যা প্রমাণ করে, ঘটেনি এমনও ঘটেছে!

ছবি: ইতিহাসের আয়নায় কিছু ‘মিথ্যা’ প্রতিচ্ছবি

ছবি তোলার এই যুগে, চোখের সামনে যা দেখি, তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ তৈরি হয়েছে।

ক্যামেরার লেন্স যেন এক জাদুঘর, যেখানে ধরা পড়ে মুহূর্তের স্মৃতি।

কিন্তু সেই ছবিই যদি হয় সাজানো, তবে? ইতিহাসের পাতা ওল্টালে এমন কিছু ‘মিথ্যা’ ছবির দেখা মেলে, যা হয়তো অনেককেই বিভ্রান্ত করেছে।

শুরুর দিকে, ছবি তোলার কৌশল যখন সবে শিখছে মানুষ, তখনই এর কারসাজি শুরু হয়।

রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য ছবিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের একটি ছবিকে শক্তিশালী দেখানোর জন্য অন্য ব্যক্তির শরীরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

এমনকী, যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তুলতে জেনারেল ইউলিসিস এস. গ্রান্টের ছবিতেও কারসাজি করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াও, অনেক সময় ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ছবির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালির স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনির ঘোড়ার ছবি তোলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

মূল ছবিতে ঘোড়ার লাগাম ধরে ছিলেন একজন, কিন্তু ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য সেই অংশটি কেটে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, খ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যেও অনেকে ছবির আশ্রয় নিয়েছেন।

বিখ্যাত আলোকচিত্রী রবার্ট ক্যাপার তোলা একটি ‘যুদ্ধ-ছবি’ নিয়ে বিতর্ক আছে।

অনেকে মনে করেন, ছবিটি সাজানো ছিল।

মিথ্যা ছবি তৈরির প্রবণতা আজও বিদ্যমান।

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ছবি সম্পাদনার কৌশলও উন্নত হয়েছে।

সম্প্রতি, ব্রিটেনের রাজ পরিবারের একটি ছবি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে ছবি সম্পাদনার প্রমাণ পাওয়া যায়।

তবে, এই ধরনের ছবিগুলোর বিস্তার লাভের পেছনে দর্শকদেরও একটা ভূমিকা আছে।

মানুষ যা দেখতে চায়, অনেক সময় সেটাই তারা বিশ্বাস করে।

এমন অনেক ছবি আছে, যা আমাদের কল্পনার জগৎকে বাস্তব করে তোলে।

অতীতে যেমন ছবি বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে, তেমনই বর্তমানেও এর প্রবণতা বাড়ছে।

সম্প্রতি, সামাজিক মাধ্যমে পোপ ফ্রান্সিসের একটি ছবি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যেখানে তাকে ফ্যাশনেবল পোশাকে দেখা যায়।

পরে জানা যায়, এটি ছিল একটি ‘এআই’ (AI) প্রযুক্তির কারসাজি।

এসব ঘটনার মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট, তা হলো – ছবির সত্যতা যাচাই করা জরুরি।

ইন্টারনেটের এই যুগে, প্রতিটি ছবিকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করার আগে, তার উৎস এবং সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

বিশেষ করে, যখন কোনো ছবি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হয়, তখন এর পেছনের গল্পটা ভালোভাবে জানা দরকার।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *