বানোয়াট ফিটনেস: তারকা খ্যাতি আর প্রতারণার অন্তরালে!

শিরোনাম: ভুঁইফোড় ফিটনেস জগৎ: মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর শরীর গড়ার মায়াজাল

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বিষয়ক তথ্যের অবাধ প্রবাহের কারণে, ফিটনেস এখন অনেকের কাছেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কিন্তু এই ডিজিটাল দুনিয়ায় কিছু মানুষ আছেন যারা নিজেদের শরীরচর্চার ছবি এবং ভিডিও আপলোড করে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে ‘ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে পরিচিত, যারা নিজেদের শরীরচর্চা এবং ডায়েটের কৌশল প্রচার করেন। তবে, এদের অনেকের সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে থাকে এক গভীর প্রতারণা।

সম্প্রতি, ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর একটি প্রতিবেদনে ফিটনেস জগতের এই অন্ধকার দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, অনেক ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সার তাদের আকর্ষণীয় শরীরের রহস্য গোপন রাখেন।

তারা শরীরচর্চার পাশাপাশি স্টেরয়েড, হরমোন এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ উপাদান ব্যবহার করেন, যা দ্রুত পেশি গঠনে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ‘লিভার কিং’ নামে পরিচিত ব্রায়ান জনসন-এর কথা বলা যায়, যিনি একসময় দাবি করতেন যে, কাঁচা কলিজা, অস্থিমজ্জা এবং অন্ডকোষ খাওয়ার মাধ্যমেই তিনি এই শারীরিক গঠন তৈরি করেছেন।

কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি প্রতি মাসে ১১,০০০ ডলারের বেশি অর্থ স্টেরয়েড কেনার জন্য খরচ করতেন।

এই ধরনের ভুয়া প্রচারণার শিকার হচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা। তারা এইসব ইনফ্লুয়েন্সারদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের দেখানো পথে হাঁটা শুরু করে। ফলে, তারা দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় স্বাস্থ্যকর উপায়ের পরিবর্তে ক্ষতিকর পথের দিকে ঝুঁকছে।

কেউ কেউ হয়তো কঠোর ডায়েট করেন, আবার কেউ স্টেরয়েড বা হরমোনের সাহায্য নেন।

এই প্রসঙ্গে, জেমস স্মিথ নামের একজন প্রশিক্ষক ও ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সারের কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি একসময় স্টেরয়েড ব্যবহার করতেন এবং এখন এর খারাপ দিকগুলো নিয়ে কথা বলেন।

তিনি মনে করেন, ফিটনেস জগতে ভালো ফল করতে হলে, কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েডের সাহায্য নেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

তবে, সব ইনফ্লুয়েন্সার যে এই পথে হাঁটেন, তা নয়। অনেকে তাদের ‘ন্যাচারাল’ বা স্বাভাবিক ফিটনেসের কথা জানান, আবার কেউ বিষয়টি এড়িয়ে যান।

কেউ কেউ আবার পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের ‘স্বাভাবিকতা’ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, যদিও এই পরীক্ষাগুলোও ফাঁকি দেওয়া সম্ভব।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী? প্রথমত, ইনফ্লুয়েন্সার ও সেলিব্রিটিদের তাদের আসল রূপ প্রকাশ করতে হবে এবং তাদের সাফল্যের পেছনের গল্প জানাতে হবে। দ্বিতীয়ত, শরীরচর্চার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত স্বাস্থ্য ও ভালো জীবন যাপন। শুধুমাত্র আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন তৈরি করাই যেন একমাত্র লক্ষ্য না হয়।

বাংলাদেশেও এই ধরনের প্রবণতা বাড়ছে। অনেক তরুণ-তরুণী দ্রুত শারীরিক পরিবর্তনের জন্য ভুল পথে পা বাড়াচ্ছেন। তাই, আমাদের সচেতন হতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে হবে।

ফিটনেস বিষয়ক যেকোনো তথ্যের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সবশেষে, মনে রাখতে হবে, সুস্থ ও সুন্দর জীবন গঠনে ধৈর্য ও সঠিক পদ্ধতির বিকল্প নেই। কোনো শর্টকাট পথ অনুসরণ না করে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *