প্রকাশ কিং-এর গোপন নথি! হত্যারহস্য উন্মোচনে কি মিলবে?

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড: বহু প্রতীক্ষিত নথি প্রকাশ, সন্দেহের জাল কি ছিঁড়বে?

১৯৬৮ সালের ৪ঠা এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন কিংবদন্তী নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। তাঁর মৃত্যুর অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় পরে, সম্প্রতি তাঁর হত্যা সম্পর্কিত বহু গোপন ফেডারেল নথি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে কিং-এর হত্যাকাণ্ডেরহস্য উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এই নথিপত্রগুলো মূলত কিং-এর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করে। এই নথিপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্তটি এসেছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে।

এর আগে, জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত কিছু গোপন নথিও প্রকাশ করা হয়েছিল। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল, জনগনের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

প্রকাশিত নথিপত্রগুলোতে কিং-এর হত্যাকাণ্ডের তদন্তের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, কিং-কে হত্যার অভিযোগে জেমস আর্ল রে নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যদিও রে-কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা দেখেন। কিং পরিবারের সদস্যরাও বরাবরই এই বিষয়ে তাঁদের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা মনে করেন, রে একা নন, বরং এর পেছনে আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত ছিল।

নথিগুলো প্রকাশের পর কিং পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে তাঁরা এই ঘটনার প্রতি সম্মান জানানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং নথিগুলোর বিষয়বস্তু উপলব্ধির ক্ষেত্রে সহানুভূতিশীল হওয়ার অনুরোধ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এই নথিগুলো যেন ঘটনার সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দেখা হয়।

ঐতিহাসিক এবং গবেষকরা এই নথিগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, এই নথিগুলোর মাধ্যমে এফবিআই সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে নতুন তথ্য জানা যেতে পারে।

বিশেষ করে, এফবিআই কিং-এর বিরুদ্ধে কোনো গোপন ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল কিনা, অথবা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য সংগ্রহ করেছিল কিনা, তা অনুসন্ধানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রকাশিত নথিপত্রগুলো থেকে হয়তো সরাসরি কোনো ‘ধোঁয়া ওঠা বন্দুক’ (smoking gun) পাওয়া যাবে না। কারণ, এফবিআইয়ের অতীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা কিং-এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছে।

তাই, এই নথিগুলো বিশ্লেষণের সময় সতর্ক থাকতে হবে।

নথি প্রকাশের এই সময়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কেন এত দেরিতে এই নথিগুলো প্রকাশ করা হলো? কেউ কেউ মনে করেন, এটি হয়তো কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ। আবার কারও মতে, এটি সরকারের স্বচ্ছতা প্রমাণ করার একটি চেষ্টা।

তবে, এর পেছনের আসল কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।

প্রকাশিত নথিগুলো থেকে কিং-এর হত্যাকাণ্ডেরহস্য কতটুকু উন্মোচন হবে, তা সময়ই বলবে। তবে, এটা নিশ্চিত যে, এই ঘটনার মাধ্যমে কিং-এর জীবনের অনেক অজানা দিক সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে।

তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *