মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে : নিরাপদ পানির অভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ!

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রাম্যমাণ আবাসনে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ মানুষের জন্য নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন খাবার পানি এখনো একটি বড় সমস্যা। দেশটির বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে ভ্রাম্যমাণ আবাসনের পার্কগুলোতে বসবাসকারী মানুষেরা প্রায়ই এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সম্প্রতি, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য, যা আমাদের দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা বহন করে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে নিজস্ব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী প্রায় ৭০ শতাংশ ভ্রাম্যমাণ আবাসন পার্ক নিরাপদ পানীয় জলের বিধি লঙ্ঘন করেছে। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, এটি শহর ও নগরের পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি।

এর মূল কারণ হলো— দূষিত পানির উৎস, পুরোনো অবকাঠামো এবং উপযুক্ত তদারকির অভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে ইউটাহ-এর মতো স্থানে, সেখানকার কর্মকর্তারা এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছেন। ইউটাহ-এর একজন পানি বিশেষজ্ঞ কল্ট স্মিথ জানান, তারা একটি ভ্রাম্যমাণ আবাসন পার্কে এমন পানি দূষণ দেখেছিলেন, যেখানে বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এই আর্সেনিকের মাত্রা ফেডারেল সরকারের নির্ধারিত সীমার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছিল। এর ফলে, কর্তৃপক্ষকে প্রায় ১০ বছর ধরে ওই পার্কের বাসিন্দাদের জন্য ‘পান করা নিষেধ’ ঘোষণা করতে হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ ভ্রাম্যমাণ আবাসনে বাস করে। এদের মধ্যে অনেকে সীমিত আয়ের মানুষ, যারা এখানে একটি বাড়ির মালিকানার সুযোগ খুঁজে পান। এই পার্কগুলোতে পানির সমস্যার কারণ হলো, অনেক সময় বাসিন্দারা তাদের ঘরগুলোর মালিক হলেও, জমির ভাড়া দেন।

ফলে, তারা প্রায়ই বাড়ির মালিকদের খারাপ রক্ষণাবেক্ষণের শিকার হন।

মিশিগানের বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সী পামেলা ম্যাক্সি জানান, পরিষ্কার পানির গুরুত্ব তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যখন তিনি তার রাজ্যের ক্যাপিটলে গিয়েছিলেন এবং একটি হোটেলে ছিলেন। তার আবাসনে, পানির সরবরাহ প্রায়ই দুর্বল থাকত এবং পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যেত।

তিনি বলেন, “আমি যখন বাথরুমে গিয়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, আরে, এখানে তো আমাকে চোখ বন্ধ করে থাকতে হবে না, কারণ আমি জানি না পানিতে কী আছে! আমি দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে কলের পানি ব্যবহার করতে পেরেছি, যা গত এক বছরে পারিনি।”

বিভিন্ন রাজ্যের কর্মকর্তারা জানান, অনেক পুরনো পাইপলাইনের কারণেও পানির সমস্যা দেখা যায়। কলোরাডোতে, একজন শিক্ষার্থী ভিক্টোরিয়া সিলভা জানান, তার আবাসনে গত তিন বছরে পানির চাপ কমে যাওয়া বা পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ২০ থেকে ৩০ বার ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ হাজার পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছোট শহর এবং গ্রামীণ অঞ্চলে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকই বিশেষজ্ঞ কর্মী এবং পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে প্রায়ই নিয়মকানুন ভাঙতে বাধ্য হয়।

এপি-র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অনেক ভ্রাম্যমাণ আবাসন পার্ক নিরাপদ পানীয় জলের পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা পরীক্ষার ফল সঠিকভাবে জানায়নি। এছাড়াও, ইপিএ-এর তথ্যভাণ্ডারে অনেক পার্কের সঠিক হিসাব নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় পার্কের মালিকরা বুঝতে পারেন না যে তারা আসলে একটি ছোট আকারের পানি সরবরাহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

এই সমস্যা সমাধানে কিছু রাজ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, ইউটাহ-তে ভ্রাম্যমাণ আবাসন পার্কগুলোতে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কঠোর নিয়মকানুন তৈরি করা হয়েছে। কলোরাডোতে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করার জন্য নতুন আইন পাস হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা এই বিষয়টির দিকে তাকাই, তাহলে বুঝতে পারি, নিরাপদ পানির অভাব একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের দেশেও অনেক বস্তি ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর বসবাস, যেখানে নিরাপদ পানির সংকট একটি নিয়মিত ঘটনা।

তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে পারি, নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত তদারকি, উপযুক্ত অবকাঠামো নির্মাণ এবং কঠোর আইন প্রয়োগ করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *