মডেলিংয়ের কঠিন জগৎ: ‘অতিরিক্ত রোগা হলেই ফ্যাশন আমাকে ভালোবাসত’

ফ্যাশন দুনিয়ার অন্তরালে: মডেলদের শরীরের মাপ নিয়ে নীরব যুদ্ধ। ফ্যাশন জগৎ সবসময়ই এক আকর্ষণীয় জগৎ, যেখানে গ্ল্যামার আর আভিজাত্যের ছোঁয়া।

কিন্তু এই ঝলমলে দুনিয়ার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক কঠিন বাস্তব চিত্র, যা অনেকের কাছেই অজানা। সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি মডেল, তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, যেখানে উঠে এসেছে শরীরের মাপ নিয়ে মডেলিং জগতে বিদ্যমান তীব্র প্রতিযোগিতার কথা।

মডেলিং জগতে টিকে থাকতে হলে শরীরের গড়ন হতে হয় বিশেষ ধরনের। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মতে, একটি আদর্শ গড়ন হলো – বুক ৩৪ ইঞ্চি, কোমর ২৪ ইঞ্চি এবং নিতম্ব ৩৪ ইঞ্চি।

পোশাকের মাপের ক্ষেত্রে এটি সাধারণত ইউকে সাইজ ৬-এর সমান। এই মাপের সঙ্গে সামান্য হেরফের হলেই অনেক সময় কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মডেলদের অভিযোগ, ফ্যাশন কোম্পানিগুলো এখনো এমন শারীরিক গড়নকেই প্রাধান্য দেয়, যা শরীরের স্বাভাবিক আকারের থেকে অনেক ভিন্ন।

এই পেশায় টিকে থাকার জন্য মডেলদের উপর চলে আসে কঠোর ডায়েট এবং ব্যায়ামের চাপ। অনেকেই তাদের শরীরের মাপ ধরে রাখতে খাবার কমিয়ে দেন, এমনকি না খেয়েও দিন কাটান।

ওজন কমানোর জন্য চলে নানা ধরনের কৌশল, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, একজন মডেল জানিয়েছেন, কীভাবে তাকে শরীরের মাপ ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত বিরতিতে ওজন পরীক্ষা করতে হতো এবং সেই অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হতো।

ফ্যাশন দুনিয়ায় বডি পজিটিভিটির কথা শোনা গেলেও, বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রতিফলন দেখা যায় না। বিভিন্ন ফ্যাশন শো-তে প্লাস সাইজের মডেলদের অংশগ্রহণ বাড়লেও, এখনো পর্যন্ত ‘চিকন গড়ন’-এর চাহিদাই বেশি।

অনেক ক্ষেত্রেই, যারা এই ধরনের শারীরিক গড়ন নিয়ে কাজ করতে চান, তাঁদের প্রতিনিয়ত সমালোচনার শিকার হতে হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁদের শারীরিক গঠন নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়, যা তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

বিষয়টি শুধু মডেলদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক সমস্যার অংশ। সমাজের এই চাপের কারণে অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের শরীর নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন এবং তাঁদের মধ্যে আত্ম-অস্বীকৃতির মনোভাব তৈরি হয়।

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে এই ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। একইসঙ্গে, শরীরের ভিন্নতাকে সম্মান জানানোর মানসিকতা তৈরি করতে হবে, যা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার জন্ম দেবে।

ফ্যাশন দুনিয়ায় পরিবর্তন আসছে, তবে তা এখনো অনেক ধীর গতিতে। বডি ইনক্লুসিভিটির ধারণাটি আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজন ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন।

একইসঙ্গে, মিডিয়া এবং সমাজেরও এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো উচিত, যাতে করে শারীরিক গড়ন নিয়ে বিদ্যমান নেতিবাচক ধারণাগুলো দূর করা যায়। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *