আতঙ্ক! আধুনিক দাসত্বের অবসান: বিশ্বনেতাদের প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জরুরি বার্তা

শিরোনাম: ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিক দাসত্ব নির্মূল করতে বিশ্বজুড়ে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান, ঝুঁকিতে কোটি কোটি মানুষ।

জাতিসংঘের (UN) প্রাক্তন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর নেতৃত্বে গঠিত আধুনিক দাসত্ব ও মানব পাচার বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক কমিশন সতর্ক করে জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিক দাসত্ব নির্মূল করতে জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে পেশ করা এক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।

‘কোনো দেশই সুরক্ষিত নয়’ শীর্ষক ১৫০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে আধুনিক দাসত্বের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং পদ্ধতিগত দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

কমিশনের মতে, এই প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা।

এতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিক দাসত্ব নির্মূলের যে লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goal 8.7) নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জনে ব্যর্থ হলে কেবল সেটিই বাধাগ্রস্ত হবে না, বরং এর কারণে আরও অনেক মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।

প্রতিবেদনে আধুনিক দাসত্বের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এতে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে, এই প্রতিবেদনে একটি প্রতিরোধ কাঠামো (Prevention Framework) তৈরি করা হয়েছে।

জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল এবং গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা আদামা ডিংয়ের ২০১৪ সালের গণহত্যা প্রতিরোধ কাঠামো অনুসরণ করে এটি তৈরি করা হয়েছে।

এই কাঠামো দেশগুলোকে আধুনিক দাসত্বের মূল কারণগুলো বুঝতে এবং এর বিভিন্ন রূপ চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার।

এর মধ্যে জোরপূর্বক শ্রম ও বিবাহ উল্লেখযোগ্য।

কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে কার্যকর এবং প্রয়োগযোগ্য স্থানীয় আইন প্রণয়ন করা, আধুনিক দাসত্বের একটি অভিন্ন সংজ্ঞা তৈরি করা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে জোরপূর্বক শ্রম বন্ধ করতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও বেশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আধুনিক দাসত্বের শিকার হয়ে আসা নাসরিন শেখ নামের একজন নারীও বক্তব্য রাখেন।

তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি সমাজের অসচেতন ভোগ এবং অর্থনৈতিক উদাসীনতার কুফলগুলো মোকাবিলার আহ্বান জানান।

আমাদের একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

নাসরিন শেখ

আমরা জানি, আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দাসত্ব আমাদের সব ভোগের মধ্যে মিশে আছে।

তবে সচেতনতা, প্রশ্ন করা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার মাধ্যমে আমরা এটি পরিবর্তন করতে পারি।”

বাংলাদেশেও আধুনিক দাসত্বের বিভিন্ন রূপ বিদ্যমান।

দারিদ্র্য, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, এবং মানব পাচারের মতো বিষয়গুলো আধুনিক দাসত্বের ঝুঁকি বাড়ায়।

এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করে আধুনিক দাসত্ব নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *