শিরোনাম: ফ্লু ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধের যুগল ভ্যাকসিন: বয়স্কদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াচ্ছে মডার্নার নতুন গবেষণা
বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে ভ্যাকসিন প্রযুক্তির উন্নয়নে চলছে নিরন্তর প্রচেষ্টা। এরই ধারাবাহিকতায়, ফ্লু এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য একটি যুগল ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে মডার্না।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই যুগল ভ্যাকসিনটি বয়স্কদের শরীরে বিদ্যমান আলাদা আলাদা ভ্যাকসিনের চেয়ে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।
গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে মূলত ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে।
ফলাফলে দেখা গেছে, যুগল ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ এবং ফ্লুর বেশ কয়েকটি স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ভ্যাকসিনটির সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ইনজেকশন স্থানে ব্যথা, ক্লান্তি এবং মাথাব্যথার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
মডার্নার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা প্রায় ৮,০০০ মানুষের ওপর এই ট্রায়ালটি পরিচালনা করেছে।
মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই যুগল ভ্যাকসিনটি। বর্তমানে কোভিড-১৯ এবং আরএসভি (RSV) ভ্যাকসিনের জন্য এই প্রযুক্তি অনুমোদিত।
তবে ফ্লু ভ্যাকসিনের জন্য এখনো এটি অনুমোদন পায়নি।
মডার্নার ধারণা, এই এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির (যেমন, মুরগির ডিম অথবা কোষের বিশাল ভ্যাট ব্যবহার করা হয়) তুলনায় দ্রুত ফ্লু ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে।
গবেষকদের মতে, যুগল ভ্যাকসিন গ্রহণের ফলে টিকাকরণের হারও বাড়তে পারে।
তবে, এই যুগল ভ্যাকসিনের জনপ্রিয়তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মায়ো ক্লিনিকের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ড. গ্রেগ পোল্যান্ড।
তাঁর মতে, ফ্লু যেহেতু ঋতুভিত্তিক, আর কোভিড-১৯ সারা বছরই বিদ্যমান, তাই এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় নির্ধারণ করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
তাছাড়াও, নতুন এই ভ্যাকসিনটি সংক্রমণ এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কমাতে কতটা কার্যকর, সেই বিষয়েও তিনি তথ্য জানতে চান।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে।
বিশেষ করে, এই ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের ঝুঁকি কতটা কমাতে পারে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রমাণ চাইছে তারা।
এর ফলে, ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত অনুমোদনের সময়সীমা পিছিয়ে ২০২৬ সাল নির্ধারণ করেছে মডার্না।
এফডিএ’র এই পদক্ষেপের সঙ্গে ড. পোল্যান্ডও একমত পোষণ করেছেন এবং কার্যকারিতার তথ্য দেখা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক বিশেষজ্ঞ এমআরএনএ ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তবে মডার্নার প্রেসিডেন্ট স্টিফেন হোগে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, এফডিএ-এর সঙ্গে তাঁদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে অন্যান্য কোম্পানিও পিছিয়ে নেই।
সম্প্রতি, নভোভ্যাক্স জানিয়েছে, তাদের তৈরি করা প্রোটিন-ভিত্তিক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এফডিএ নতুন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর জন্য অনুরোধ করেছে।
ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং তার অনুমোদন একটি জটিল প্রক্রিয়া।
বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
আমাদের দেশের স্বাস্থ্য বিভাগও ভ্যাকসিন অনুমোদনের ক্ষেত্রে একই ধরনের মানদণ্ড অনুসরণ করে থাকে।
নতুন এই যুগল ভ্যাকসিনের বিষয়ে এখনও অনেক কিছু জানার বাকি আছে।
তবে, এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
আমাদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুসরণ করে, আমরা সবাই যেন নিজেদের সুরক্ষায় সচেতন থাকি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস