ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা: যুদ্ধবিরতির পরেও শান্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ
গত সপ্তাহে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র সামরিক সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও, পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি।
উভয় দেশই সীমান্তে তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে এবং যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সামরিক অভিযান ‘কেবলমাত্র স্থগিত’ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলে ভারত উপযুক্ত জবাব দেবে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মোদি আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদের মদদদাতাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো পার্থক্য করা হবে না। এর মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। গত ৬ মে ভারতীয় সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করেছে, তারা সন্ত্রাসী অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে। যদিও পাকিস্তান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, কারণ ভারত সিন্ধু জল চুক্তি থেকে জল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এই পদক্ষেপকে পাকিস্তানের জন্য একটি কূটনৈতিক চাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা তাদের কৃষি ও বেসামরিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জলের উপর নির্ভরশীলতাকে প্রভাবিত করবে। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতা করেছিলেন, দাবি করেছেন যে তার প্রশাসন একটি পারমাণবিক সংঘাত এড়াতে সক্ষম হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে, কাশ্মীর উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের জীবন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের অভিযোগ এনেছে।
সংঘাতের কারণে উভয় দেশের সামরিক কমান্ডাররা তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বৈঠকে বসতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদী নীতি নির্ধারণের পরিবর্তে এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হবে ভবিষ্যতে উত্তেজনা কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সামান্য ভুলের কারণেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ একটি পারমাণবিক বিপর্যয়ের সম্ভবনা রয়েছে।
১৯৯৯ সালের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এটিই সবচেয়ে গুরুতর সামরিক সংঘাত। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের বন্ধ করে দেওয়া ৩২টি বিমানবন্দর পুনরায় চালু করেছে।
বর্তমানে, উভয় দেশই সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং শান্তির পথে ফিরে আসার জন্য উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা