মহাকাশ বিজয়ের স্বপ্নে বিভোর বিশ্বের ধনকুবেরদের মাঝে এক ভিন্ন সুরের জন্ম দিয়েছেন ফরাসি শিল্পী, অ্যাক্টিভিস্ট ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নেলি বেন হায়ুন-স্টেপ্যানিয়ান। তাঁর নির্মিত নতুন চলচ্চিত্র ‘ডোপেলগ্যাঙ্গার্স³’ (Doppelgängers³) -এ তিনি মহাশূন্যে মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিদ্যমান ধারণাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন।
এলন মাস্ক ও জেফ বেজোসের মতো ধনকুবেরদের মহাকাশ জয়ের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে এই দৌড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে।
নেলি বেন হায়ুন-স্টেপ্যানিয়ান সবসময়ই প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। নাসা’র বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমনকি তিনি ‘ইউনিভার্সিটি অফ দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তৈরি করেছেন, যেখানে কোনো টিউশন ফি ছাড়াই পড়াশোনা করা যায়।
তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোতেও এই ভিন্নতা স্পষ্ট। ‘ডোপেলগ্যাঙ্গার্স³’-এ তিনি মহাকাশযাত্রার ধারণাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈচিত্র্যময় করে তোলার কথা বলেছেন।
চলচ্চিত্রটিতে দেখা যায়, নেলি তাঁর দুই ‘ডোপেলগ্যাঙ্গার্স’-এর সঙ্গে স্পেনের একটি গুহায় যান, যেখানে মহাকাশ অভিযানের একটি模拟 (simulation) করা হয়।
তাঁর এই কাজটি আন্তঃপ্রজন্মগত মানসিক আঘাত (intergenerational trauma) এবং ঔপনিবেশিকতার প্রভাব নিয়ে তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রতিফলন। ফরাসি, আর্মেনীয় ও আলজেরীয় বংশোদ্ভূত নেলি মনে করেন, মহাকাশযাত্রার ধারণা সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত, যেখানে সমাজের সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
এই চলচ্চিত্রটি শুধু একটি কল্পনানির্ভর সৃষ্টি নয়, বরং সমাজের প্রতিচ্ছবি। ছবিতে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিল টার্টার, স্নায়ুবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ এবং ট্রান্সজেন্ডার অধিকার কর্মী।
নেলি মনে করেন, মহাকাশ জয় কোনো বিলাসিতা নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা—যা আমাদের সমাজের নতুন রূপ দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
তাঁর এই চলচ্চিত্রটি বর্তমানে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং দর্শক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
তাঁর কাজের মাধ্যমে নেলি বেন হায়ুন-স্টেপ্যানিয়ান সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে যেমন প্রশ্ন করেন, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান