মোল্দোভায় তীব্র উত্তেজনার মধ্যে অনুষ্ঠিত হলো সংসদীয় নির্বাচন, যেখানে রাশিয়া হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করবে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে, নাকি মস্কোর দিকে ঝুঁকবে।
খবর অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনটিতে ভোট গ্রহণের হার ছিল বেশ ভালো।
রবিবার অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনে মূল লড়াইটা ছিল একদিকে পশ্চিমা সমর্থিত দল এবং অন্যদিকে রুশপন্থী দলগুলোর মধ্যে। প্রেসিডেন্ট মায়া সান্দুর নেতৃত্বাধীন সরকারপন্থী ‘পার্টি অফ অ্যাকশন অ্যান্ড সলিডারিটি’ (পিএএস) দল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে লড়ছে, যেখানে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে রাশিয়া-ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
এই নির্বাচনের ফল দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নির্বাচনের আগে, মলদোভার প্রধানমন্ত্রী ডরিন রেচান সতর্ক করে বলেছিলেন যে রাশিয়া সম্ভবত তাদের ক্ষমতা দখলের জন্য ‘শত শত মিলিয়ন ইউরো’ খরচ করছে। তিনি এটিকে ‘আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য চূড়ান্ত লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা ভোট কেনার চেষ্টা করছে, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সাইবার হামলা চালাচ্ছে, নির্বাচনের সময় ব্যাপক দাঙ্গা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে এবং ইউরোপপন্থী দলের সমর্থন কমানোর জন্য অনলাইনে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এটিকে ‘রাশিয়া-বিরোধী’ ও ‘ভিত্তিহীন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। মলদোভার কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের দিন ভুয়া বোমা হামলার হুমকি, সাইবার হামলা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং সহিংসতা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকশ অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করেছে।
মলদোভার বিশাল প্রবাসী ভোটারদের এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও পশ্চিমা ও রাশিয়ার মধ্যে বিভাজন দেখা গিয়েছিল, যেখানে প্রবাসীরা সান্দুকে সমর্থন করে তার পুনর্নির্বাচন নিশ্চিত করেছিলেন।
নির্বাচনে পিএএসের প্রধান প্রতিপক্ষ হলো রুশপন্থী ‘প্যাট্রিয়টিক ইলেক্টরাল ব্লক’, যারা ‘রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ এবং ‘নিরপেক্ষতা’র পক্ষে। এছাড়াও ‘আওয়ার পার্টি’ নামে একটি দলও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যারা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ‘ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি’র কথা বলে।
নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সংকট, জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ, এবং দারিদ্র্যের মতো বিষয়গুলো প্রভাব ফেলেছে, তেমনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও অস্থিরতা বেড়েছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বেশি হলে, পিএএস দলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মলদোভা একটি ছোট দেশ হলেও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য এর গুরুত্ব অনেক। কারণ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে জয়ী হলে ইইউ আরও শক্তিশালী হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস