ডাবলিনের বিখ্যাত মলি ম্যালোন মূর্তি: পর্যটকদের আপত্তিকর আচরণ বন্ধের দাবিতে প্রচারণা।
আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের একটি অতি পরিচিত স্থান হলো মলি ম্যালোন মূর্তি। মলি ম্যালোন নামের এক কল্পিত চরিত্রকে উৎসর্গ করে তৈরি করা এই ব্রোঞ্জ মূর্তিটি শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
পর্যটকদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তবে সম্প্রতি এই মূর্তির প্রতি কিছু পর্যটকের আপত্তিকর আচরণের কারণে একে রক্ষা করার জন্য এক তরুণী প্রচারণা শুরু করেছেন।
টিল্লি ক্রিপওয়েল নামের ২৩ বছর বয়সী এক তরুণী, যিনি বর্তমানে ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করছেন, এই প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি পেশায় একজন সঙ্গীতশিল্পীও।
গত আড়াই বছর ধরে তিনি ডাবলিনের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মলি ম্যালোন মূর্তির কাছেও তিনি নিয়মিত গান করেন।
টিল্লি লক্ষ্য করেছেন, অনেক পর্যটক মূর্তির সঙ্গে ছবি তোলার সময় এর স্তন স্পর্শ করেন। এমনকি অনেকে এর সঙ্গে অশালীন আচরণও করে থাকেন।
মলি ম্যালোন আসলে ডাবলিনের লোককথার একটি চরিত্র, যিনি মাছ বিক্রি করতেন। তার স্মরণে তৈরি হওয়া গানটি শহরের অনানুষ্ঠানিক সঙ্গীত হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু মূর্তির প্রতি দর্শকদের এই ধরনের আচরণে ক্ষুব্ধ টিল্লি। তার মতে, এই ধরনের আচরণ শুধু মূর্তির প্রতি অসম্মানজনকই নয়, বরং নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও একটি খারাপ উদাহরণ।
এই বিষয়ে টিল্লি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি যখন গান করি, তখন একই স্থানে কয়েক ঘণ্টা কাটাই। আমি প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা দেখি।
একদিন আমি আর সহ্য করতে পারিনি এবং মনে হলো, এখানে গান করতে হলে আমাকে এই বিষয়ে কিছু একটা করতে হবে।” তিনি আরও জানান, গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরেই এই প্রবণতা চলছে।
সাধারণত, ছবি তোলার সময় মূর্তির স্তনে হাত দেওয়া হয়। কেউ কেউ তো এর স্তন চুম্বন করে বা মুখেও নেয়।
টিল্লি তার প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে “লিভ মলি এলোন (#LeaveMollymAlone)” নামে একটি সামাজিক মাধ্যম ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। তিনি ডাবলিন সিটি কাউন্সিলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন এবং মূর্তিকে আরও উঁচু বেদীর উপর স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি চান, পুরো মূর্তিটিকে নতুন করে রঙ করা হোক, যাতে এর স্তনের বিবর্ণতা দূর করা যায়। এছাড়াও, মলি ম্যালোন-এর গল্পটি উল্লেখ করে একটি ফলক স্থাপন করারও প্রস্তাব করেছেন তিনি।
ডাবলিন সিটি কাউন্সিল বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। তারা ইতোমধ্যে ট্যুর গাইড কোম্পানিগুলোকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে, যাতে পর্যটকেরা মূর্তিকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকে।
টিল্লি নিজেও মূর্তির প্রতি হওয়া এই ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করেন, তবে এটি তার জন্য বেশ কষ্টকর। কারণ ব্যস্ত দিনগুলোতে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০ জন পর্যটক মূর্তিকে স্পর্শ করেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদস্বরূপ টিল্লি ম্যালোনকে নিয়ে লেখা গানটির একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করেছেন। যেখানে তিনি মূর্তির প্রতি দর্শকদের এই ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন