মাঝেমাঝে জীবন যেন এক কঠিন পরীক্ষার মঞ্চ হয়ে ওঠে। শোক, বিচ্ছেদ, আর একরাশ উদ্বেগের মাঝেও যারা ভালোবাসার আলো জ্বালিয়ে রাখেন, তাদের গল্পগুলো সত্যিই অনুপ্রেরণীয়।
সম্প্রতি এমনই এক মায়ের কথা জানা গেছে, যিনি ব্যক্তিগত শোকের গভীরতা সত্ত্বেও ১২ বছরের ছেলের জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করে তুলেছেন।
এই মায়ের নাম কে’আন্না জ্যাকসন। একদিকে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো কঠিন পরিস্থিতি, অন্যদিকে প্রিয়জন হারানোর বেদনা—এসবের মধ্যেই তিনি তাঁর সন্তানের জন্য ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
টিকটকে শেয়ার করা একটি ভিডিওর মাধ্যমে কে’আন্নার এই ত্যাগ ও ভালোবাসার গল্পটি এখন সবার কাছে পরিচিত।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ছেলের জন্মদিনের আয়োজন করছেন তিনি। ক্যাপশনে লেখা ছিল, “পরিবারে শোকের ছায়া থাকা সত্ত্বেও, আমি ছেলের ১২তম জন্মদিন উদ্যাপন করার পথ খুঁজে পেয়েছি।
কে’আন্না জানান, তাঁর ছেলে সাধারণত বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসে।
তাই জন্মদিনের সকালে তিনি ছেলের বন্ধুদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের সাহায্য চান।
অপ্রত্যাশিতভাবে সবাই রাজি হওয়ায়, পরিকল্পনাটি সফল হয়।
এরপর দ্রুত অফিসের কাজ সেরে, বাজার করে, ছেলের প্রিয় খাবার চিক-ফিল-এ (Chick-fil-A) থেকে খাবার কিনে বাড়ি ফেরেন তিনি।
বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেকে জন্মদিনের সারপ্রাইজ দেন কে’আন্না।
তবে এই উদযাপনের আড়ালে ছিল এক নারীর গভীর শোক।
গত কয়েক মাস ধরে কে’আন্না একদিকে যেমন তাঁর ঠাকুরমাকে হারিয়েছেন, তেমনই চার বছরের বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করেছেন।
তিনি বলেন, “শোক সবসময় একরকম থাকে না। কোনোদিন হয়তো সবকিছু ঠিক আছে মনে হয়, আবার কোনোদিন হঠাৎ করেই একরাশ আবেগ এসে ভিড় করে।
এই কঠিন সময়েও কে’আন্না তাঁর ছেলেদের জন্য সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, “তাদের ভালো লাগা, খেলাধুলা, অথবা তাদের যখন কোনো আশ্রয় দরকার—আমি সবসময় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি।
বিশেষ করে ১২ বছরে পা দেওয়া ছেলের প্রতি তিনি বিশেষভাবে মনোযোগী ছিলেন।
কারণ, এই বয়সে ছেলেরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপে প্রবেশ করে।
ছেলের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ শুধু উপস্থিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং ছিল গভীর আবেগ ও পারস্পরিক বোঝাপড়া।
কে’আন্না জানান, তিনি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে তাঁর ছেলেদের জড়িয়ে ধরেন, যা তাদের মানসিক শান্তির জন্য জরুরি।
তাঁর মতে, শুধু আনন্দের মুহূর্তেই নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনে এই ধরনের আবেগ প্রকাশ করা প্রয়োজন।
ছেলেরা বাড়ি ফিরলে, আমি কাজ করলেও তারা প্রথমে আমার কাছে আসে, আমাকে জড়িয়ে ধরে।
স্কুলের খবর জানার আগেই তাদের এই ভালোবাসার প্রকাশ আমাকে মুগ্ধ করে।
কে’আন্না চান, তাঁর ছেলে যেন জন্মদিনের আনন্দ-উৎসবের চেয়ে ভালোবাসার এই গভীর বন্ধনটা সবসময় মনে রাখে।
তিনি বলেন, “আমি চাই, আমার ছেলে মনে রাখুক, আমরা সবসময় একে অপরের পাশে থাকি।
এটা একতরফা কোনো সম্পর্ক নয়, আমরা একসঙ্গে পথ চলছি।
নিজের জন্য সময় বের করার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে কে’আন্না জানান, তিনি তাঁর ছেলেদেরও একইভাবে উৎসাহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আজ আমার ভালো লাগছে না’। আর তাদেরও একই কথা বলার স্বাধীনতা আছে।
কোনো বিষয়ে কথা বলতে না চাইলে, সেটিও স্বাভাবিক।
তবে আমরা সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি।
অন্যান্য অভিভাবকদের উদ্দেশে কে’আন্নার পরামর্শ হলো, সবার আগে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, “বাবা-মা হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে, নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে।
এর জন্য তিনি ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখা, প্রার্থনা করা অথবা সকালে শান্ত হয়ে কফি পান করার মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দেন।
কে’আন্না আরও বলেন, আবেগ প্রকাশ করতে ভয় পাওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, “অনুভূতিগুলোকে অনুভব করুন।
নিজের সঙ্গে একাত্ম হন।
কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন।
তাদের জড়িয়ে ধরুন।
মনে রাখবেন, আপনি একা নন।
বাইরের জগৎটা হয়তো সবকিছু সাজানো গোছানো দেখায়, কিন্তু আমরা সবাই কোনো না কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।
তথ্য সূত্র: পিপল