মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নারীর অভিজ্ঞতা নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে। আনা ওসবর্ন নামের ৩০ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক তলপেটে ব্যথা ছিল।
চিকিৎসকরা প্রথমে বিষয়টিকে সাধারণ ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) হিসেবে চিহ্নিত করেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে আনা ওসবর্নের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তিনি তীব্র তলপেটে ব্যথায় ভুগছিলেন।
বিভিন্ন চিকিৎসক তাকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেন, কিন্তু ওষুধ শেষ হওয়ার পরেই তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়তেন।
আনা জানান, তার মনে হচ্ছিল, তার শরীরের অভ্যন্তরীন অঙ্গগুলো যেন ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। চিকিৎসকদের কাছে তিনি তার সমস্যার কথা জানালেও, তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি।
তারা বরং আনাকে অতিরিক্ত সংবেদনশীল এবং অতি-নাটকীয় হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
চিকিৎসকরা অবশেষে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যোনিপথের পরীক্ষা করেন।
আনা জানান, তার শরীরে IUD (Intrauterine device) স্থানান্তরিত হয়েছে কিনা, তা জানতে চাওয়ার পরেই এই পরীক্ষা করা হয়।
পরীক্ষার সময় ডাক্তার এবং আনা দুজনেই বেশ বিচলিত হয়ে পড়েন। ডাক্তার এর আগে এমন পরিস্থিতি দেখেননি।
পরীক্ষার সময় ডাক্তার কিছু একটা দেখতে পান এবং ধারণা করেন যে এটা হয়তো এন্ডোমেট্রিওসিস।
কিন্তু যখন ডাক্তার সেটি টেনে বের করার চেষ্টা করেন, তখন তিনি বলেন, “ওহ মাই গড, এটা তো একটা ট্যাম্পন!” এরপর ডাক্তার পুরো জিনিসটা বের করেন এবং তারা দুজনেই সম্পূর্ণ হতবাক হয়ে যান।
জানা যায়, সম্ভবত এক বছর আগে আনা এই ট্যাম্পন ব্যবহার করেছিলেন।
সেই সময়ে তার শরীরে IUD প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
আনা জানান, IUD লাগানোর পরেই তিনি ভালো বোধ করছিলেন না।
এই ঘটনার প্রায় ৬ মাস থেকে ১ বছর আগে তিনি ট্যাম্পন ব্যবহার করেছিলেন।
তিনি আরও জানান, শারীরিক সম্পর্কের সময় তিনি কিছুই অনুভব করেননি। এমনকি আগের বছর প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষার সময়ও কিছু ধরা পড়েনি।
পরে জানা যায়, আনা টক্সিক শক সিনড্রোম (TSS)-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এটি একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক অবস্থা, যেখানে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করে। ক্লীভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, এই অবস্থা সাধারণত ট্যাম্পন ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত।
তবে এটি যে কারও হতে পারে এবং গুরুতর অঙ্গহানি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
আনা বলেন, “আমি জানতাম না টক্সিক শক সিনড্রোম (TSS) সত্যি হয় এবং মানুষের সাথে ঘটে। আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম, আমার শরীর ভেতর থেকে পচে যাচ্ছে কিনা। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।”
সৌভাগ্যবশত, আনা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
তিনি মনে করেন, চিকিৎসকদের বারবার নিজের সমস্যার কথা বলার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি যদি হাল ছেড়ে দিতাম, তাহলে হয়তো এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতাম না।
আমার মনে হয়েছিল, নিজের স্বাস্থ্যের জন্য আমাকে অবশ্যই কথা বলতে হবে। এটি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। না হলে, আমি হয়তো আজ এখানে থাকতাম না।”
তথ্য সূত্র: পিপলস