এখানে, মঙ্গোলীয় শিল্পী এঞ্জি (Enkhjargal Erkhembayar)-এর সঙ্গীত জীবন নিয়ে একটি নতুন সংবাদ নিবন্ধ:
**সংস্কৃতির সীমানা পেরিয়ে সঙ্গীতের সুর: মঙ্গোলিয়ার এঞ্জির বিশ্বজয়**
এঞ্জি, একজন মঙ্গোলীয় শিল্পী, যিনি তাঁর ব্যতিক্রমী সঙ্গীত প্রতিভার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর গানের বৈশিষ্ট্য হলো ঐতিহ্যবাহী মঙ্গোলীয় লোকসংগীত এবং আধুনিক জ্যাজ-এর এক অসাধারণ মিশ্রণ। এই শিল্পী বর্তমানে জার্মানির মিউনিখে বসবাস করেন, তবে তাঁর শিকড় প্রোথিত আছে মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটরে।
উলানবাটরের তুষার-শীতল পরিবেশে বেড়ে ওঠা এঞ্জির কাছে গান ছিল যেন স্বাভাবিক এক বিষয়। শৈশবে পরিবারের সদস্যরা এবং বন্ধুদের সাথে মিলে ইউর্টে (যাযাবরদের ঐতিহ্যবাহী তাঁবু) বসে পুরনো লোকগীতি গাওয়া ছিল তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এই গানগুলি তাঁদের উষ্ণ রাখত এবং নিজেদের অনুভূতির প্রকাশ করত। এই পরিবেশই এঞ্জিকে গানের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে।
পরবর্তীতে, এঞ্জি ‘লং সং’ নামে পরিচিত মঙ্গোলীয় লোকসংগীতের একটি বিশেষ ধারার প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। এই ধারায় কণ্ঠশিল্পীরা শব্দের বিস্তার এবং গভীরতা ফুটিয়ে তোলার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন। এঞ্জি বলেন, “প্রথমে আমি একটি স্থানীয় শিক্ষকের কাছে এই বিষয়ে জানতে পারি এবং মজা করার জন্য প্রশিক্ষণ শুরু করি। খুব দ্রুতই আমি আমার কণ্ঠের মাধুর্য খুঁজে পাই, যেন এটি আমার ভেতরেই ছিল।”
সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা এঞ্জিকে আরও গভীরে নিয়ে যায়। মিউনিখের গ্যোটে-ইনস্টিটিউট-এর একটি জ্যাজ শিক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি জ্যাজ সঙ্গীতে আকৃষ্ট হন। এর পরে তিনি জ্যাজকে গভীর ভাবে ভালোবাসতে শুরু করেন, কারণ এর স্বাধীনতা এবং গভীরতা তাঁকে মুগ্ধ করে। জ্যাজ সঙ্গীতে, শিল্পীরা একটি মুহূর্তের উপর নির্ভর করে এবং তাঁদের ভেতরের অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ পান, যা লং সং-এর মতোই।
এঞ্জি তাঁর সঙ্গীতের মাধ্যমে দুটি সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন। তাঁর গানগুলোতে মঙ্গোলীয় সংস্কৃতির গভীরতা এবং জ্যাজের আধুনিকতা একসঙ্গে মিশেছে। তাঁর গানের কথাগুলো সাধারণত মঙ্গোলীয় ভাষায় লেখা হলেও, তিনি জার্মান এবং ইংরেজি ভাষাতেও গান করেন। তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘সোনর’-এ এই বিভিন্নতা বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। এই অ্যালবামে তিনি উদ্বাস্তু জীবনের অনুভূতি, সংস্কৃতির বিভেদ এবং মিলনের কথা তুলে ধরেছেন।
এঞ্জির সঙ্গীত শুধু মঙ্গোলিয়াতেই নয়, সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি ইউরোপ এবং চীনের বিভিন্ন দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তাঁর গান শুনে অনেক শ্রোতা আবেগাপ্লুত হয়েছেন, যদিও তাঁরা তাঁর গানের ভাষা পুরোপুরি বোঝেন না। এঞ্জি মনে করেন, তাঁর গান মানুষের হৃদয়ে পৌঁছেছে, যা তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।
এঞ্জি মনে করেন, তাঁর সঙ্গীত জীবন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বিভিন্ন ধরনের শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে চান এবং তাঁর সঙ্গীতকে আরও বিস্তৃত করতে চান। তিনি বলেন, “আমি এখনো নিজেকে একজন জ্যাজ শিল্পী হিসেবে দেখি, তবে বিভিন্ন ধরনের কণ্ঠের সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি জানি না ভবিষ্যতে কী হবে, তবে আমি গান থামাবো না।”
তথ্য সূত্র: The Guardian