মহাকাশে দুঃসাহসিক অভিযান: ব্যর্থতা সত্ত্বেও কি থেমে যাবে স্বপ্ন?

মহাকাশ অভিযান থেকে শুরু করে জীবাশ্ম গবেষণা, বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কারের পথে হাঁটছেন। সম্প্রতি, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিজ্ঞান জগৎকে নাড়িয়ে দিয়েছে, যা নিচে আলোচনা করা হলো।

জাপানের একটি বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘আইস্পেস’ চাঁদে অবতরণের মিশনে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ‘রেসিলিয়েন্স’ নামের মহাকাশযানটি চাঁদের বুকে নামার কথা ছিল, কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার চাঁদে অবতরণের চেষ্টা ব্যর্থ হল তাদের। এর আগে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ‘হাকুটো-আর’ নামের একটি ল্যান্ডার চাঁদের বুকে বিধ্বস্ত হয়। সংস্থার প্রধান নির্বাহী তাকেশি হাকামাদা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুলগুলি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

তাদের মূলমন্ত্র ছিল, ‘চন্দ্রাভিযান কখনও থামবে না’।

এদিকে, প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল আবিষ্কার করেছেন। তারা মৃত সাগরের কাছে পাওয়া স্ক্রলগুলির (লিপি) বয়স সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন।

কার্বন ডেটিং এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর ব্যবহারের মাধ্যমে জানা গেছে, এই স্ক্রলগুলো আগে যা ধারণা করা হতো, তার চেয়েও অনেক পুরনো। ধারণা করা হচ্ছে, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে দ্বিতীয় শতকের মধ্যে এই স্ক্রলগুলি লেখা হয়েছিল।

এই আবিষ্কার প্রাচীন ইহুদি ধর্ম এবং প্রারম্ভিক খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে।

অন্যদিকে, বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০৮ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে ডুবে যাওয়া একটি বিশ্বযুদ্ধকালীন সাবমেরিনের ছবি তুলেছেন। ‘উডস হোল ওশেনোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশন’-এর গবেষকরা গভীর সমুদ্রের নিচে থাকা সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষের ছবি তুলেছেন, যা আগে কেউ দেখেনি।

১৯ জন ক্রু সদস্যসহ সাবমেরিনটি সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল।

এছাড়াও, একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা জীবাণুবিদ্যাকে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত প্লেগ মহামারীর কারণ ছিল ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ নামক ব্যাকটেরিয়া।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই ব্যাকটেরিয়ার দুর্বল প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু শক্তিশালী প্রজাতিগুলি এখনও টিকে আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গবেষণা প্লেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

ক্ষুদ্র পরজীবী কীট বা নেমাটোড-এর আচরণ নিয়েও বিজ্ঞানীরা নতুন তথ্য পেয়েছেন। জার্মানির ‘ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিমেল বিহেভিয়ার’ এবং ‘ইউনিভার্সিটি অফ কনস্টাঞ্জ’-এর গবেষকরা দেখেছেন, পচা ফল থেকে সংগৃহীত নেমাটোডগুলি নিজেদের মধ্যে জোটবদ্ধ হয়ে একটি কাঠামো তৈরি করে, যা তাদের আকারের চেয়ে ১০ গুণ বড় হতে পারে।

এই আচরণ কীভাবে ঘটে, তা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে একটি কৌতূহলের বিষয়।

মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের সঙ্গে প্রতিবেশী গ্যালাক্সি অ্যান্ড্রোমিডার সংঘর্ষের ঘটনাটি সম্ভবত আগে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে দেরিতে ঘটবে।

অন্যদিকে, গুয়াতেমালায় মায়া সভ্যতার একটি প্রাচীন কমপ্লেক্সের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে পাথরের তৈরি ‘পূর্বপুরুষ দম্পতি’র মূর্তি পাওয়া গেছে।

এছাড়াও, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি আদিম পাখির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন, যা কয়েক দশক ধরে একটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল। এই জীবাশ্মটিতে পাখির প্রথম পালকের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *