আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ এক তরুণ, যিনি ছিলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা এক ছাত্র, তাঁর জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ৯৫ বছর আগে। বর্ণবাদের বিভৎস রূপের শিকার হওয়া সেই তরুণের সম্মানার্থে, তাঁর মৃত্যুর এত বছর পর, অবশেষে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ঘটনাটি ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়, যেখানে মোরহাউস কলেজ নামের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডেনিস হাবার্ট নামক এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে মরণোত্তর সম্মানসূচক স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করেছে।
১৯৩০ সালের জুন মাসে, মাত্র ১৮ বছর বয়সে ডেনিস হাবার্টকে শ্বেতাঙ্গদের একটি দল আটলান্টার একটি খেলার মাঠে পিটিয়ে হত্যা করে। মোরহাউস কলেজে ধর্ম বিষয়ে অধ্যয়নরত এই তরুণের অপরাধ ছিল, শ্বেতাঙ্গ এক নারীকে অপমান করার মিথ্যা অভিযোগ।
এই ঘটনার ৯৫ বছর পর, হাবার্টের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর ভাইপো ইমাম প্লেমন এল-আমিন, এই বিশেষ সম্মাননা গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে কলেজের প্রেসিডেন্ট ডেভিড থমাস, হাবার্টকে ‘মোরহাউসের সন্তান’, ‘ন্যায়ের শহীদ’, এবং ‘১৯৩০ দশকের আটলান্টার আরেক ট্র্যাভন মার্টিন’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ইমাম প্লেমন এল-আমিন, যিনি তাঁর চাচার সঙ্গে কখনো দেখা করেননি, তিনি এই মুহূর্তটিকে ইসলামের একটি উক্তির সঙ্গে তুলনা করেন। ইসলামে বলা হয়, মৃত্যুর পর একজন মানুষের তিনটি জিনিস অবশিষ্ট থাকে – তাঁর দান, তাঁর জ্ঞান এবং তাঁর জন্য দোয়া করা পরিবার।
এল-আমিন জানান, এই অনুষ্ঠানে তাঁর চাচার নামে বহু দোয়া করা হয়েছে। তাঁর জীবন ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করা হয়েছে, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে জীবনের মূল্য এবং ন্যায়বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরে।
ডেনিস হাবার্টের পরিবার আটলান্টার সমাজে সুপরিচিত ছিল। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সম্মানিত ধর্মযাজক, আর মা ছিলেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
এল-আমিন বলেন, “একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষার্থীর এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড, যা তৎকালীন সময়ে জর্জিয়া রাজ্যের মানুষের মানবাধিকারের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করে।”
ফুটন কাউন্টি রেমব্রেন্স কোয়ালিশন-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৮৭৭ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র ফুলটন কাউন্টিতেই অন্তত ৩৮ জন মানুষকে হত্যা করা হয়। এই সময়কালে জর্জিয়ায় প্রায় ৬০০ জন কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককে হত্যা করা হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো রাজ্যের তুলনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ইক্যুয়্যাল জাস্টিস ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক ব্রায়ান স্টিভেনসন বলেন, “এই ধরনের ইতিহাসের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং সহিংসতার শিকার হওয়া মানুষদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ভবিষ্যতে আমাদের পথ খুলে দেবে।”
ডেনিস হাবার্টের হত্যাকাণ্ডটি ছিল একটি ভয়াবহ ঘটনা, যা সেই সময়ে সেখানকার মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন মোরহাউসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট জন হোপের গাড়িচালক।
এল-আমিন বলেন, “ডেনিসের এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, মানুষ হিসেবে তাঁর যে অবদান ছিল, মোরহাউসে তাঁর যে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল, তা হয়তো তিনি পূরণ করতে পারেননি, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে তিনি আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন।”
ঐতিহাসিক এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে, মোরহাউস কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডেনিসের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের ছাত্রদের মধ্যে সাহস ও ন্যায়বিচারের আদর্শকে জাগ্রত করবে।
এল-আমিন মনে করেন, এই সম্মাননা প্রদানের পেছনে ফুলটন কাউন্টি রেমব্রেন্স কোয়ালিশন এবং ইক্যুয়ালিটি ইনিশিয়েটিভের অবদান রয়েছে, যারা ডেনিস হাবার্টসহ অন্যান্য লিন্সিংয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে কাজ করে যাচ্ছে।
এই ঘটনার স্মৃতিচারণ, ভবিষ্যতের প্রজন্মকে অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ন্যায়বিচারের পথে চলতে উৎসাহিত করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন