গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন: ফুঁসে উঠল মরক্কো, প্রতিবাদে উত্তাল জনতা!

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির নিন্দা জানিয়ে মরক্কোতে কয়েক হাজার মানুষের বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি আগ্রাসনের পাশাপাশি ট্রাম্পের ফিলিস্তিন নীতিকেও তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন।

রবিবার রাবাতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বিক্ষোভে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করেন। তাদের মধ্যে অনেকে ইসরায়েলের পতাকার ওপর দিয়ে হাঁটেন এবং নিহত হামাস নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীরা মূলত গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং সেখানকার সাধারণ মানুষের ওপর এর প্রভাবের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বিক্ষোভকারীরা বিশেষভাবে ট্রাম্পের ফিলিস্তিন বিষয়ক নীতির সমালোচনা করেন। তারা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার প্রস্তাব করেছিলেন, যা গাজাকে নতুন করে সাজানোর একটি অংশ ছিল। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলের নীতিও তাদের অসন্তুষ্টির কারণ। যদিও অনেক মরক্কান মনে করেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতিও ট্রাম্পের থেকে খুব বেশি ভিন্ন নয়।

কাসাব্লাঙ্কা থেকে বিক্ষোভে যোগ দিতে আসা মোহাম্মদ তউসি বলেন, ‘ট্রাম্প এই যুদ্ধকে আরও খারাপ করেছেন।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘বাইডেন কিছু বিষয় গোপন করেছেন, কিন্তু ট্রাম্প সবকিছু প্রকাশ্যে এনেছেন।’ বিক্ষোভকারীরা মূলত ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছেন।

মরক্কোর সাবেক ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রী আবদেলহাক এল আরবি বলেন, যুদ্ধের কারণে বিক্ষোভের কারণগুলো আরও বেড়েছে। তার মতে, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনগণের মধ্যে এই ক্ষোভ চলতেই থাকবে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো যুদ্ধ নয়, গাজাকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে।’

এই বিক্ষোভে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষ অংশ নিয়েছিল, যাদের মধ্যে ইসলামপন্থী সংগঠন ‘আল-আদল ওয়াল ইহসান’-এর সদস্যরাও ছিলেন। মরক্কোর কর্তৃপক্ষ সাধারণত বিক্ষোভ সহ্য করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা বিদেশি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করলে বা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে কিছু আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিদের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫০,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যদিও নিহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক এবং কতজন যোদ্ধা, তা তারা উল্লেখ করেনি। ইসরায়েলের এই হামলায় গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং একসময় সেখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *